হলিউডের
বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। জন্ম ১৯৪৯ সালের ২২ জুন। অসাধারণ
অভিনয়শৈলীর জন্য অস্কার পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন ১৯ বার। তিনবার জয়
করেছেন অস্কার। নিউইয়র্কের ভাসার কলেজের সমাবর্তনে তিনি এ বক্তব্য দেন।
এখানে কথা বলার জন্য আমাকে কেন ডাকা হয়েছে? আমি কী জানি বলে তোমরা মনে করো? অথবা আমি কী উপস্থাপন করব, যেটা তোমরা জানতে চাও?
যখন আমি নিজেকে এই প্রশ্নটি করলাম, তখন আমি নিজেকেই বললাম—তোমার সাফল্য তাদের কাছে তুলে ধরো। তুমি ভাসার কলেজে পড়েছ, সেখান থেকেই বের হয়েছ, যখন যা করতে চেয়েছ, তা-ই করেছ এবং এর জন্য তুমি জীবনে পুরস্কৃতও হয়েছ। অস্কার সম্মাননা, দুই সন্তান। আরও অনেক কিছু। তারা তোমাকে ডেকেছে, কারণ তারা মনে করে, তুমি জানো, কেন তুমি সফল হয়েছ।
আজকে যেটা বলতে চাই, সেটি হলো ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থ এ জন্য যে আমি সেগুলো এখনো শেষ করতে পারিনি। সুতরাং, সত্যিকার জীবনের অংশ যার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাকে তৈরি করতে শুরু করেছিল; আমার ইচ্ছাশক্তিকে খুঁজে বের করা, বাছাই করার সক্ষমতা অর্জন, সততা বজায় রাখার সংগ্রাম, এমন আরও অনেক কিছু।
আমি জানি, আমি কিছু সুফল নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। আমার স্নেহশীল বাবা ও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া কিছু সাধারণ জ্ঞান আমাকে শুরু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে তুমি কী নিয়ে যাবে? কখনো আমার মনে হতো, যদি আমি পেছনে ফিরে যেতে পারতাম, কারণ তথাকথিত দরকারি দলিলগুলো নিতান্তই অর্থহীন মনে হতো আমার। অর্থের প্রয়োজন আছে, তাই আমার সব অর্জিত জ্ঞানকে ‘টস’ করতে ইচ্ছা করে।
অভিজ্ঞতা থেকে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, তা নিজেই একটা পুরস্কার। যদি আমি কোনো কঠিন কাজ বাছাই করি, তা আমাকে প্রচুর আনন্দ দেবে। অন্তত আমি আগ্রহী হব, এমনকি যদি কেউ সঙ্গে না-ও থাকে। স্বপ্ন ও অভিশাপের মধ্যের পার্থক্যটি নানা ছদ্মনামে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে চলেছে। আমি নিশ্চিত যে এটা প্রত্যেকের জীবনে প্রতি ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
আমার উপদেশ হলো, এই সংকটের দিকে তাকিয়ে ভাবো, কোনটি করে তুমি বেঁচে থাকতে চাও। যদি তুমি অভিশাপটিকে বেছে নাও, তবে তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনো তোমার পায়ে কামড় বসাতে আসবে না। কিন্তু তোমার বিবেক, তোমার স্বভাবজাত সচেতনতা এবং চাহিদার প্রয়োজনীয়তা তোমার শক্তিকে ঝালাই করবে। এটা শুধু তোমার কাজে নয়, তোমার জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে মন এবং হৃদয়ের কঠোর অনুশীলনে তোমাকে সহায়তা করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ দক্ষতা অর্জনের প্রবৃত্তি আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা এবং সন্তুষ্টজনক সফল জীবন উপহার দেয়।
প্রকৃত অর্থে জীবন হলো অনেকটা লেখাপড়ার মতো। দক্ষতা সব সময় পুরস্কৃত নাও হতে পারে। আমরা আমাদের সামনে যা দেখি, যা বাছাই করি, সেটি কখনো কখনো আরও বড় পরিসরে জনমত অনুসারেও হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখবে, যখন নিজের চিন্তা ও বিশ্লেষণগুলোকে অর্জনযোগ্য মনে হয়, যদি তুমি দ্রুত কাজ শুরু করো এবং যথারীতি উপায়টি পেয়ে যাও। বাইরে থেকে দেখে অনেক সময় মনে হতে পারে, এটা অসম্ভব কিন্তু একাগ্রচিত্তে লেগে থাকাই সফলতার মূল পথ।
আমি যখন প্রথম নিউইয়র্ক আসি, তখন পার্কের কাছে ৬৯ নম্বর স্ট্রিটে থাকতাম। মাসে আমি বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন—এই তিনটি বিল পেতাম। আমার দুটি ভাই ছিল, চার-পাঁচজন খুব কাছের বন্ধু ছিল, কিছু পরিচিত লোকজন ছিল কথা বলার। আমি ডায়েরি লিখতাম। আমি তিনটি খবরের কাগজ এবং বইয়ের রিভিউ পড়তাম। বিকেলে একটু ঘুমিয়ে নিতাম পারফরম্যান্সের আগে। কখনো অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে আড্ডাও দিতাম।
আমার ছোট্ট ক্যারিয়ারে অনেক লোকের সঙ্গে মিশেছি। আমার ভাই ও বন্ধুরা অনেকে বিয়ে করেছে। আমার সচেতনতা ও দায়িত্ব অনেক বেড়েছে, যেকোনো কিছুর পেছনের গল্পই আমি এখনো মনে করতে পারি। আমি তোমাদের যা বলছি, সেটা হলো সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়, খুব তাড়াতাড়ি এটা জটিল হয়ে যায় এবং তোমাকে মনে করিয়ে দেয় তুমি কে, কীভাবে এসেছ এবং আসলে তুমি কী এবং এটি মাঝেমধ্যেই কাজের স্পৃহা দেবে।
ধীরে ধীরে আমি দেখলাম চারপাশে আমার যোগাযোগ বাড়ছে, আমার দায়িত্ব বাড়ছে, সুতরাং আমার ইচ্ছাগুলোকে চেপে রাখার পরিবর্তে আগামী প্রজন্মের জন্য আমি ঝুঁকি নিলাম। তোমার জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট ক্ষেত্রের বিশ্বাসকে একত্রিত করো। কাজ করার জন্য তোমার হৃদয়কে তৈরি করো এবং অন্যদের জীবনের সবচেয়ে ভালো দিকগুলো জানতে চেষ্টা করো। তোমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ, তোমার সত্য, তোমার গোপনীয়তা—এগুলোকে কখনো নিঃশেষ হতে দিয়ো না। অভিনন্দন সবাইকে।
সূত্র: গ্র্যাজুয়েশন উইজডম (www.graduationwisdom.com/speeches)।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মুন রহমান
এখানে কথা বলার জন্য আমাকে কেন ডাকা হয়েছে? আমি কী জানি বলে তোমরা মনে করো? অথবা আমি কী উপস্থাপন করব, যেটা তোমরা জানতে চাও?
যখন আমি নিজেকে এই প্রশ্নটি করলাম, তখন আমি নিজেকেই বললাম—তোমার সাফল্য তাদের কাছে তুলে ধরো। তুমি ভাসার কলেজে পড়েছ, সেখান থেকেই বের হয়েছ, যখন যা করতে চেয়েছ, তা-ই করেছ এবং এর জন্য তুমি জীবনে পুরস্কৃতও হয়েছ। অস্কার সম্মাননা, দুই সন্তান। আরও অনেক কিছু। তারা তোমাকে ডেকেছে, কারণ তারা মনে করে, তুমি জানো, কেন তুমি সফল হয়েছ।
আজকে যেটা বলতে চাই, সেটি হলো ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থ এ জন্য যে আমি সেগুলো এখনো শেষ করতে পারিনি। সুতরাং, সত্যিকার জীবনের অংশ যার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাকে তৈরি করতে শুরু করেছিল; আমার ইচ্ছাশক্তিকে খুঁজে বের করা, বাছাই করার সক্ষমতা অর্জন, সততা বজায় রাখার সংগ্রাম, এমন আরও অনেক কিছু।
আমি জানি, আমি কিছু সুফল নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। আমার স্নেহশীল বাবা ও মায়ের কাছ থেকে পাওয়া কিছু সাধারণ জ্ঞান আমাকে শুরু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে তুমি কী নিয়ে যাবে? কখনো আমার মনে হতো, যদি আমি পেছনে ফিরে যেতে পারতাম, কারণ তথাকথিত দরকারি দলিলগুলো নিতান্তই অর্থহীন মনে হতো আমার। অর্থের প্রয়োজন আছে, তাই আমার সব অর্জিত জ্ঞানকে ‘টস’ করতে ইচ্ছা করে।
অভিজ্ঞতা থেকে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, তা নিজেই একটা পুরস্কার। যদি আমি কোনো কঠিন কাজ বাছাই করি, তা আমাকে প্রচুর আনন্দ দেবে। অন্তত আমি আগ্রহী হব, এমনকি যদি কেউ সঙ্গে না-ও থাকে। স্বপ্ন ও অভিশাপের মধ্যের পার্থক্যটি নানা ছদ্মনামে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে চলেছে। আমি নিশ্চিত যে এটা প্রত্যেকের জীবনে প্রতি ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
আমার উপদেশ হলো, এই সংকটের দিকে তাকিয়ে ভাবো, কোনটি করে তুমি বেঁচে থাকতে চাও। যদি তুমি অভিশাপটিকে বেছে নাও, তবে তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনো তোমার পায়ে কামড় বসাতে আসবে না। কিন্তু তোমার বিবেক, তোমার স্বভাবজাত সচেতনতা এবং চাহিদার প্রয়োজনীয়তা তোমার শক্তিকে ঝালাই করবে। এটা শুধু তোমার কাজে নয়, তোমার জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে মন এবং হৃদয়ের কঠোর অনুশীলনে তোমাকে সহায়তা করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ দক্ষতা অর্জনের প্রবৃত্তি আমাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা এবং সন্তুষ্টজনক সফল জীবন উপহার দেয়।
প্রকৃত অর্থে জীবন হলো অনেকটা লেখাপড়ার মতো। দক্ষতা সব সময় পুরস্কৃত নাও হতে পারে। আমরা আমাদের সামনে যা দেখি, যা বাছাই করি, সেটি কখনো কখনো আরও বড় পরিসরে জনমত অনুসারেও হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখবে, যখন নিজের চিন্তা ও বিশ্লেষণগুলোকে অর্জনযোগ্য মনে হয়, যদি তুমি দ্রুত কাজ শুরু করো এবং যথারীতি উপায়টি পেয়ে যাও। বাইরে থেকে দেখে অনেক সময় মনে হতে পারে, এটা অসম্ভব কিন্তু একাগ্রচিত্তে লেগে থাকাই সফলতার মূল পথ।
আমি যখন প্রথম নিউইয়র্ক আসি, তখন পার্কের কাছে ৬৯ নম্বর স্ট্রিটে থাকতাম। মাসে আমি বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন—এই তিনটি বিল পেতাম। আমার দুটি ভাই ছিল, চার-পাঁচজন খুব কাছের বন্ধু ছিল, কিছু পরিচিত লোকজন ছিল কথা বলার। আমি ডায়েরি লিখতাম। আমি তিনটি খবরের কাগজ এবং বইয়ের রিভিউ পড়তাম। বিকেলে একটু ঘুমিয়ে নিতাম পারফরম্যান্সের আগে। কখনো অন্য অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে আড্ডাও দিতাম।
আমার ছোট্ট ক্যারিয়ারে অনেক লোকের সঙ্গে মিশেছি। আমার ভাই ও বন্ধুরা অনেকে বিয়ে করেছে। আমার সচেতনতা ও দায়িত্ব অনেক বেড়েছে, যেকোনো কিছুর পেছনের গল্পই আমি এখনো মনে করতে পারি। আমি তোমাদের যা বলছি, সেটা হলো সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়, খুব তাড়াতাড়ি এটা জটিল হয়ে যায় এবং তোমাকে মনে করিয়ে দেয় তুমি কে, কীভাবে এসেছ এবং আসলে তুমি কী এবং এটি মাঝেমধ্যেই কাজের স্পৃহা দেবে।
ধীরে ধীরে আমি দেখলাম চারপাশে আমার যোগাযোগ বাড়ছে, আমার দায়িত্ব বাড়ছে, সুতরাং আমার ইচ্ছাগুলোকে চেপে রাখার পরিবর্তে আগামী প্রজন্মের জন্য আমি ঝুঁকি নিলাম। তোমার জীবনের প্রতিটি ছোট ছোট ক্ষেত্রের বিশ্বাসকে একত্রিত করো। কাজ করার জন্য তোমার হৃদয়কে তৈরি করো এবং অন্যদের জীবনের সবচেয়ে ভালো দিকগুলো জানতে চেষ্টা করো। তোমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ, তোমার সত্য, তোমার গোপনীয়তা—এগুলোকে কখনো নিঃশেষ হতে দিয়ো না। অভিনন্দন সবাইকে।
সূত্র: গ্র্যাজুয়েশন উইজডম (www.graduationwisdom.com/speeches)।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মুন রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন