বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫

অহিংসাই একমাত্র পথ

কৈলাস সত্যার্থী ২০১৪ সালে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৫৪ সালের ১১ জানুয়ারি ভারতের মধ্যপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী কৈলাস ১৯৮৩ সালে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে ‘শৈশব বাঁচাও আন্দোলন’ শুরু করেন।
যেসব মানুষ সাহায্যহীন, যারা তাদের জীবনের আশা হারিয়ে ফেলেছে; আমরা সেসব বিচ্ছিন্ন পরিবার আর মানুষকে নিয়ে কাজ করি। সব মানুষ আমার কাজ পছন্দ করে না। সে সময় তারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ শুরু করে। আমরা জানি, আমরা সঠিক পথেই চলছি। আমার এক সহকর্মীকে গুলি করা হয়েছিল, আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমার সারা শরীরে ক্ষতের আঘাত আছে। আমরা সামাজিক অন্যায়-অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়ছি। আমাদের লড়াই যদি কাজে না দিত, তাহলে আমরা এ আঘাত পেতাম না। আমরা পথ ছাড়িনি।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্যই আমাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমার কাজ শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে এক আন্দোলন। প্রত্যেক মানুষেরই শিশুদের মঙ্গলের জন্য এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া উচিত।
শুধু ভারতে কাজ করার জন্য আমাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়নি। আমি ১৪৪টি দেশে কাজ করি। সব জায়গাতেই আমার কাজের ধরন এক। আমি যে উৎসাহে আফ্রিকাতে কাজ করি, সেই একই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় লাতিন আমেরিকাতেও কাজ করে চলেছি। আমি পাকিস্তানেও একই আগ্রহে কাজ করেছি। এটা আমার জন্য এক বৈশ্বিক যুদ্ধ। আমি গর্বিত যে ভারতেই প্রথম এই লড়াই শুরু হয়। আমি যে লড়াই শুরু করি, তা ছড়িয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোতে। আমরা এমন এক মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি, যেখানে মহাত্মা গান্ধী সব সমস্যার সমাধান করতেন শান্তি আর অহিংসা দিয়ে। আমি শতভাগ অহিংস উপায়েই আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমি আমার সংগ্রামের সবকিছুতে শান্তিময় পথেই বিশ্বাস করি।
আমার এ পুরস্কার অনেক বড় সম্মাননা। এ স্বীকৃতি পৃথিবীর লাখো শিশুর জন্য পরম সম্মানের। আমি প্রত্যাশা করি, অনেক মানুষ শিশুদের দাসত্বের বিরুদ্ধে এ লড়াইয়ে যোগ দেবেন। এটা শুধু ভারতের নয়, এটা সারা বিশ্বের লড়াই। আমরা বৈশ্বিকভাবে এ সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাব। পৃথিবীর সব দেশের শিশুদের জন্যই রয়েছে আমার দায়িত্ব।
আমার মা-বাবার কথা ভীষণ মনে পড়ে। আমার মা আমাকে আক্রমণের শিকার হতে দেখেছেন। আমি যখন আমার কাজের জন্য প্রকৌশল পেশা ছেড়ে দিই, তখন তিনি অনেক কেঁদেছিলেন। তিনি আমার কাজের ধরন বুঝতে পেরেছিলেন, আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। আমার পথচলায় যাঁরা আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে আমি স্মরণ করি। আমার দুই সহকর্মী কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন, তাঁদেরকে আমি ভীষণ স্মরণ করছি। যখন আমি শিশুদের বন্দীত্ব-দাসত্বের হাত থেকে মুক্ত করে তাদের মায়ের কাছে নিয়ে যাই, তখনকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতো না। মায়েদের চোখে তখন অশ্রুর বাঁধ ভাঙে। সেই অশ্রু তখন আমার কাছে আশীর্বাদ মনে হয়। আমি সেসব মুক্ত শিশুর মুখে অনেক কিছু দেখতে পাই। যখন তার হাসি দেখি, তখনো আমি অন্য কিছু দেখতে পাই। সেসব শিশুর মুখে মুক্তির স্বর্গীয় এক অনাবিল হাসি দেখি আমি। সেই হাসিই তো আমার সর্বময় শক্তি, সবকিছুর অনুপ্রেরণা।
আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে শিশুদের বিরুদ্ধে এ অন্যায় প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
আমি শিশুদের বন্ধুমাত্র। কেউ তাদেরকে অসম্মানের বস্তু হিসেবে দেখবেন না। তারা নিষ্পাপ ও সরাসরি কথা বলে। আমি শিশুদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা শিখি। মানুষ প্রায় সময়ই শিশুতোষ আচরণগুলোকে নির্বোধ কিংবা বোকামি মনে করেন। এ ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে, বদলাতে হবে চিন্তাচেতনা। আমি শিশুদের জন্য একটি সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১১ অক্টোবর ২০১৪ প্রকাশিত সাক্ষাৎকার অবলম্বনে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ: জাহিদ হোসাইন খান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^