বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

নিজের সঙ্গে লড়াই: জ্যাকি চ্যান

হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা মার্শাল আর্টিস্ট জ্যাকি চান। ১৯৫৪ সালের ৭ এপ্রিল হংকংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। রাশ আওয়ার, সাংহাই নুন, অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেইজ, দ্য কারাতে কিড, দ্য ফরবিডেন কিংডম ইত্যাদি তাঁর অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্র। ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত জ্যাকি বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত।
মানুষ আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। ‘জ্যাকি, তুমি বিস্ময়, কিংবদন্তি।’ কথাটা শুনতে কিন্তু বেশ শ্রুতিমধুর! কিন্তু আমি আসলে তেমন কিছু নই, নিতান্তই সাধারণ এক মানুষ।
আমি কখনো অন্যকে অনুসরণ করতে চাইতাম না। সিনেমার শুরুর দিকে অনেকে আমাকে ব্রুস লিকে অনুসরণ করতে বলত। কিন্তু আমার পরিচালক বলেছিলেন যা ইচ্ছে তাই করতে। কাউকে অনুসরণ করলে বেশি দূর যাওয়া যায় না। নিজেকে অন্যের কাছে অনুকরণীয় করতে চাইলে লড়তে হয় নিজের সঙ্গে।
কোনো কিছু এক দিনে পাওয়া যায় না। আমি বছরের পর বছর মার্শাল আর্টে সময় দিয়েছি। শিক্ষকদের কাছ থেকে নিয়মশৃঙ্খলার কড়া অনুশাসনে আবদ্ধ ছিল জীবন। কখনো ভুল করলে আমরা একইভাবে আধা ঘণ্টা এক পায়ে দাঁড়িয়ে কিংবা এক হাত উঁচু করে বসে থাকতাম। তখন আমার কাছে পুরো বিষয়টা ভীষণ কষ্টের মনে হতো। এখন সেই সময়ের কথা ভাবলে আমার আনন্দ লাগে। কী ছিলই না সে দিনগুলো! এখন বুঝি, সেই অনুশাসনের জন্য আজকের আমি।
আমরা অনেক গরিব ছিলাম। আমার বেড়ে ওঠা ছিল সিনেমার শুটিং সেটে। আমি শিশু অভিনেতা ছিলাম অনেকগুলো সিনেমায়। অনেক ছোট থেকে আমার স্বপ্ন ছিল আমি স্ট্যান্টম্যান হব। সেই সময়ে হংকংয়ের সিনেমার জগৎ এখনকার মতো ছিল না। সিনেমা নিয়ে বেঁচে থাকা ছিল দুঃস্বপ্ন। আমি ১৮ বছর বয়সে স্ট্যান্টম্যান হিসেবে কাজ শুরু করি। পারিশ্রমিক ছিল এক পাউন্ডেরও কম। সিনেমায় আমি আছি ৫০ বছরেও বেশি সময় ধরে। এখনো আমি শিখেই চলেছি। আমি অ্যাকশন পছন্দ করি কিন্তু রক্তারক্তি কিংবা সংঘাত নয়। তাই তো আমার লক্ষ্য থাকে মারামারির সঙ্গে কমেডিকে যোগ করা। আমার সিনেমায় মারামারি দেখে দর্শকেরা ভয় পায় না, কমেডি মনে করে হাসে। দিনশেষে হাসিটাই মানুষ মনে রাখে। পৃথিবী জয় করা যায় হাসি দিয়ে।
হাসির জন্য মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমি হংকংয়ে বাড়ি থেকে জুতা কিনতে বাইরে বের হলে আমার চারপাশে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ‘জ্যাকি, জ্যাকি’ ডাক শুনতে হয়। আমি চশমা-টুপি পরে বের হলেও আমাকে সবাই চিনে ফেলে। অনেক সময় পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমায় অভিনয় করার সমস্যা অনেক। এই ধরুন মানুষের কাছে জুরাসিক পার্ক সিনেমা অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু কজন মানুষ এর অভিনেতাদের নাম জানে? সবাই তো চেনে ডাইনোসরদের, কারও কি মানুষের নাম মনে থাকে? কিন্তু এশিয়ার মানুষেরা অন্য রকম। তাদের কাছে জ্যাকি চ্যান মানেই অন্য কিছু। সে সব পারে। গল্প যা-ই হোক না কেন, তার জয় হবেই।
আমি ছোটবেলায় ভীষণ মোটা ছিলাম। আমার নাম দেওয়া হয়েছিল আ-পুও, যার অর্থ কামানের গোলা। মা-বাবার সঙ্গে মাত্র ছয় বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাই। সেখানকার স্কুলে ভর্তি হলে আমি নাম বদলে ফেলি। স্কুলশিক্ষককে নাম বলতে চেয়েছিলাম পল। কিন্তু আমি পল উচ্চারণ করতে পারিনি, তখন আমার নাম সবাইকে জানাই স্টিভ। এক বন্ধুর স্টিভ নামটি পছন্দ হয়নি। সে আমাকে জ্যাক চ্যান বলে ডাকা শুরু করে। আমি জ্যাককে জ্যাকি বানিয়ে দিই।
সবকিছুর আগে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষা। যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি অনেক কুসংস্কারে বিশ্বাস করতাম। তখন আমি অপদার্থ মূর্খ ছিলাম। আমি বিশ্বাস করতাম চাঁদের অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তখন সব ধরনের প্রতারণা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। ফুটপাতে ব্যথার জন্য বাঘের হাড় বিক্রি করত কেউ কেউ। আমি তাদের বিশ্বাস করতাম। কেউ অসুস্থ হলে তারা ভালুকের ঘাম বিক্রি করত। এমনকি কেউ কেউ বলত, মার্শাল আর্টে নাকি মাত্র তিন ঘুষিতেই মানুষকে কাবু করে দেওয়া যায়। এগুলো সবই ছিল প্রতারণা, ধান্দা। এসব প্রতারণা আর ধান্দা থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে চাই শিক্ষা। শিশু-কিশোরেরা যদি খালি ভিডিও গেমস নিয়ে পড়ে থাকে, তাহলে তারা শিখবে কোথা থেকে? শিশুদের জন্য আমার পরামর্শ, জ্যাকি চ্যান হওয়ার জন্য কখনোই কুংফু অনুশীলন করবে না। জ্যাকি চ্যান একজনই, তোমরা তাকে অন্যভাবে ছাড়িয়ে যাও। যত পারো স্কুলে যাও। মন দিয়ে পড়াশোনা করো, কম্পিউটার চালানো শেখো। কুংফুর চেয়ে পড়াশোনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: ওয়েবসাইট। সিএনএন ও দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে
লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^