বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

দেখে এলাম, শিখে এলাম

ছোটবেলায় মেঘের দেশে ওড়ার ইচ্ছেগুলো ঘুড়ির কাছে দিয়েছিলাম, বড় হয়ে দিয়েছিলাম স্বপ্নের কাছে। অবশেষে স্বপ্ন আমায় নিয়ে গেল মেঘের দেশ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। এবার স্টাডি অ্যাট ইউএস ইনস্টিটিউট (সুসি) প্রোগ্রামের আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার ২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন, যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ছিলেন ৫ জন।
এরা হলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিশাত পারভেজ, আইন বিভাগের জুলকার নাইন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সামিরা জান্নাত, ঢাকার পাঠশালা ইন্সটিটিউট থেকে রওনক মার্টিন এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ থেকে আমি আফিয়া সুলতানা।
২১ জুন থেকে ২৯ জুলাই, পাঁচ সপ্তাহের দীর্ঘ সফর। গন্তব্য ওয়াশিংটনের সিয়াটল। সংস্কৃতি বিনিময়ের এই প্রকল্পের মূল বিষয় ছিল ‘নিউ মিডিয়া ও জার্নালিজম’। প্রথমেই সিয়াটল টাইমস পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের মিটিংয়ে অংশগ্রহণ। এরপর ইটনভিল শহরের মেয়রের সঙ্গে বৈঠক, স্পেস নিডলের ওপর থেকে সিয়াটল দেখা, মাউন্টরেইনারের বরফের পথে পাড়ি দেওয়া, ক্যাম্প ফায়ার, গভীর রাতে লেকের পাড়ে বারবিকিউ, শিকাগো লেকের বাণিজ্যিক সৌন্দর্য আর লিঙ্কন মেমোরিয়ালের ঐতিহ্য—দারুণ সব স্মৃতি।
এত কিছুর মাঝেও সব থেকে মজার বিষয় ছিল ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি। মনেই হতো না যে কোনো ক্লাসে বসে আছি, কিছু শিখতে হবে। বিভিন্ন খেলা, গল্প, অভিজ্ঞতা, আলোচনার মধ্য দিয়ে কীভাবে যে ক্লাস শেষ হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না। প্রতিদিন ভোরে বেস্ট আমেরিকান রিপোর্ট ম্যাগাজিন পড়ে মেলাতে হতো আগের দিনের লেকচারের সঙ্গে, এরপর লিখতে হতো নিজের পর্যবেক্ষণ। সবার সেই পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্লাসে চলত তুমুল বিতর্ক।
এ সফরে আমাদের সবচেয়ে অবাক করেছে, আমেরিকানদের স্বেচ্ছাশ্রম প্রকল্প। ‘ফুডব্যাংক’-এ এসে জমা হয় বিভিন্ন দোকানের উদ্বৃত্ত খাওয়ার আর ক্ষুধার্ত মানুষজন এখান থেকে খাবার নিয়ে যায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘কমিউনিটি ফার্ম-এ অবসরপ্রাপ্ত ব্যাক্তি ও শিক্ষার্থীরা এসে চাষ করেন ফল ও সবজি। প্রাপ্ত ফসল চলে যায় ফুডব্যাংকে। স্ট্রিট নিউজ পত্রিকা সহায়তা করছে গৃহহীনদের গৃহায়ণে।
গণমাধ্যম কার্যালয় পরিদর্শন, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ, ক্লাস, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, অ্যাডভেঞ্চার, আমেরিকান পরিবারের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি কাটানো, কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। কমতি ছিল শুধু দেশের মাটির গন্ধের। ক্যাম্প ফায়ারের পাশে যখন ‘নোঙ্গর নোঙ্গর তোল তোল’ গান গাচ্ছিলাম, লক্ষ করছিলাম আমাদের পাঁচজনের কণ্ঠে দেশপ্রেমের কাঁপন। শিকাগোর উইলিস টাওয়ারের সঙ্গে যখন বাঙালি প্রকৌশলী এফ আর খানের (ফজলুর রহমান খান) কৃতিত্ব বর্ণনা করল, উইলিস টাওয়ারে বাংলায় ‘স্বাগতম’ লেখা দেখলাম, ভারতীয় রেস্তোরাঁয় যখন ওয়েটার বাংলায় কথা বলে উঠল, প্রতিটি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমি বাঙালি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ফিরে এলাম আবারও সেই প্রিয় বাংলাদেশে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^