পাওলে কোয়েলোর জন্ম ব্রাজিলে, ১৯৪৭ সালের
২৪ আগস্ট। বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান এই লেখকের সবচেয়ে আলোচিত বইয়ের নাম দ্য
আলকেমিস্ট। বইটি বিশ্বের ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী বইটি
বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটিরও বেশি। পর্তুগিজ ভাষার জনপ্রিয় এই
কথাসাহিত্যিক লেখালেখি বিষয়ে নতুন লেখকের জন্য দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো: বই প্রকাশিত হলেই যে সেটা দেদারসে বাজারে বিকোবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কাজেই তুমি কী লিখেছ, সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখো।
বিশ্বাস রাখো পাঠকের ওপর: তোমার পাঠকের ওপর বিশ্বাস রাখো। কখনোই তোমার লেখার অন্তর্নিহিত বিষয়কে পাঠকের সামনে ব্যাখ্যা করতে যেয়ো না। শুধু ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আভাস দিয়ে যাও। বাকিটুকু বুঝে নেওয়ার দায়ভার পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দাও। পাঠকই বুঝে নিক, তুমি কী বোঝাতে চেয়েছ।
অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাও: যখন তুমি কিছু লিখতে বসো তখন চেষ্টা করো সেটা তোমার অভিজ্ঞতার আলোকে লিখতে। লেখাটা সমৃদ্ধ হবে।
সমালোচনা সহো: কিছু লেখক চায় যে তার সহকর্মীরা তার পাশে থাকুক। তারা চায়, সহকর্মীরা তার কাজের স্বীকৃতি দিক। এ ধরনের ভাবনা কেবল তোমার পরনির্ভশীলতাই প্রকাশ করে, আর কিছু নয়। দয়া করে এসব ভুলে যাও। তোমার হৃদয়ের প্রতি যত্নবান হও আর ভালোবাসার আদান-প্রদান করো। কখনো অন্য লেখকদের অনুকম্পা প্রত্যাশা কোরো না। অন্যের সমালোচনা সইবার মতো শক্তি অর্জন করো।
নোট রেখো না: যদি তুমি তোমার আইডিয়া লিখে রাখো, তুমি পরাজিত হবে। তুমি তোমার আবেগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, ভুলে যাবে তোমার জীবন। তোমাকে একজন পর্যবেক্ষক হতে হবে। নোট রাখা ভুলে যাও। কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ নয় তা তোমার লেখার ধরনই বলে দেবে।
গবেষণা থেকে বিরত থাকো: তোমার উপন্যাসকে একেবারে গবেষণাকর্ম বানিয়ে ফেলো না। তাতে তুমি নিজে যেমন বিরক্ত হবে, তেমনি তোমার পাঠকও বিরক্ত হবে। তুমি কতটা মেধাবী তা তোমার উপন্যাসের মাধ্যমে দেখাতে যেয়ো না। তুমি বরং তোমার হৃদয়কে তুলে ধরো তোমার গল্পে-উপন্যাসে-লেখায়।
কতটুকু লিখবে, কীভাবে লিখবে: যতটুকু লেখা দরকার আমি আসলে ততটুকুই লিখি। প্রথম বাক্যের পেছনের অংশটুকুই যোগসূত্র স্থাপন করে শেষ বাক্যের সঙ্গে। অতএব লেখার ব্যাপারে মিতভাষী হও।
লেখার ধরন: গল্পের বয়ানভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা কোরো না। স্রেফ একজন জাদুকরের মতো গল্প বলে যাও। আমি দেখেছি, অনেক লেখক গল্প বলতে গিয়ে অনেক কসরত করে; একই গল্প নানাভাবে বলতে চেষ্টা করে। এটা অনেকটা ফ্যাশনের মতো। গল্প বলার ধরন বা বয়ানভঙ্গি হচ্ছে পোশাক; কিন্তু মনে রেখো পোশাক কখনো তার ভেতরের বস্তুকে নির্দেশ করে না।
ব্যর্থ হওয়ার ভয়: সবশেষে তোমাদের একটা গল্প শোনাই। গল্পটা ব্যর্থ হওয়ার ভয় নিয়ে। একদা আসান চাহ নামের এক সন্ন্যাসী এক টুকরো জমি পেয়েছিলেন। হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই। তো জমিটা পাওয়ার পর তিনি ভাবলেন এখানে সন্ন্যাসীদের জন্য একটা আশ্রম বানাবেন। ভাবনা অনুযায়ী তিনি তাঁর এক শিষ্যকে আশ্রমের ভবন নির্মাণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর কয়েক মাসের জন্য দূরে কোথাও চলে গেলেন।
মাস পাঁচেক পর ফিরে এসে চাহ দেখলেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যদিও যাওয়ার সময় তিনি স্থানীয় স্থপতিদের মাধ্যমে কিছু কাজ এগিয়ে রাখার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যা-ই হোক, ফিরে আসার পর ওই স্থপতিদের একজন চাহকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন প্রকল্পের কোন কাজটা আমাদের সবার আগে শুরু করা উচিত? কীভাবে আমরা এখন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারি?
উত্তরে চাহ বললেন, ‘ভালো কিছু করার ইচ্ছাই ভালো ফল বয়ে আনে। কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তোমার ভেতর যদি ভুল করার ভয় না থাকে, তবে তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে দ্রুত এবং ফলাফল হবে চমৎকার। অতএব সেই কাজটাই আগে শুরু করো, যেটা তোমার মন করতে বলে।’
অতএব, নতুন লেখকেরা, তোমরা তোমাদের জীবনের চলার পথকে সাহসের সঙ্গে পাড়ি দাও। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই ভয়ে ভীত হয়ো না, অন্যের সমালোচনাকে ভয় পেয়ো না। এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটা কথাই বলব, অতিরিক্ত আত্মসমালোচনায় নিজেকে পঙ্গু করে ফেলো না।
সূত্র: পাওলো কয়েলোর নিজস্ব ব্লগ। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো: বই প্রকাশিত হলেই যে সেটা দেদারসে বাজারে বিকোবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। কাজেই তুমি কী লিখেছ, সে ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখো।
বিশ্বাস রাখো পাঠকের ওপর: তোমার পাঠকের ওপর বিশ্বাস রাখো। কখনোই তোমার লেখার অন্তর্নিহিত বিষয়কে পাঠকের সামনে ব্যাখ্যা করতে যেয়ো না। শুধু ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আভাস দিয়ে যাও। বাকিটুকু বুঝে নেওয়ার দায়ভার পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দাও। পাঠকই বুঝে নিক, তুমি কী বোঝাতে চেয়েছ।
অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাও: যখন তুমি কিছু লিখতে বসো তখন চেষ্টা করো সেটা তোমার অভিজ্ঞতার আলোকে লিখতে। লেখাটা সমৃদ্ধ হবে।
সমালোচনা সহো: কিছু লেখক চায় যে তার সহকর্মীরা তার পাশে থাকুক। তারা চায়, সহকর্মীরা তার কাজের স্বীকৃতি দিক। এ ধরনের ভাবনা কেবল তোমার পরনির্ভশীলতাই প্রকাশ করে, আর কিছু নয়। দয়া করে এসব ভুলে যাও। তোমার হৃদয়ের প্রতি যত্নবান হও আর ভালোবাসার আদান-প্রদান করো। কখনো অন্য লেখকদের অনুকম্পা প্রত্যাশা কোরো না। অন্যের সমালোচনা সইবার মতো শক্তি অর্জন করো।
নোট রেখো না: যদি তুমি তোমার আইডিয়া লিখে রাখো, তুমি পরাজিত হবে। তুমি তোমার আবেগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, ভুলে যাবে তোমার জীবন। তোমাকে একজন পর্যবেক্ষক হতে হবে। নোট রাখা ভুলে যাও। কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটা লেখা গুরুত্বপূর্ণ নয় তা তোমার লেখার ধরনই বলে দেবে।
গবেষণা থেকে বিরত থাকো: তোমার উপন্যাসকে একেবারে গবেষণাকর্ম বানিয়ে ফেলো না। তাতে তুমি নিজে যেমন বিরক্ত হবে, তেমনি তোমার পাঠকও বিরক্ত হবে। তুমি কতটা মেধাবী তা তোমার উপন্যাসের মাধ্যমে দেখাতে যেয়ো না। তুমি বরং তোমার হৃদয়কে তুলে ধরো তোমার গল্পে-উপন্যাসে-লেখায়।
কতটুকু লিখবে, কীভাবে লিখবে: যতটুকু লেখা দরকার আমি আসলে ততটুকুই লিখি। প্রথম বাক্যের পেছনের অংশটুকুই যোগসূত্র স্থাপন করে শেষ বাক্যের সঙ্গে। অতএব লেখার ব্যাপারে মিতভাষী হও।
লেখার ধরন: গল্পের বয়ানভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা কোরো না। স্রেফ একজন জাদুকরের মতো গল্প বলে যাও। আমি দেখেছি, অনেক লেখক গল্প বলতে গিয়ে অনেক কসরত করে; একই গল্প নানাভাবে বলতে চেষ্টা করে। এটা অনেকটা ফ্যাশনের মতো। গল্প বলার ধরন বা বয়ানভঙ্গি হচ্ছে পোশাক; কিন্তু মনে রেখো পোশাক কখনো তার ভেতরের বস্তুকে নির্দেশ করে না।
ব্যর্থ হওয়ার ভয়: সবশেষে তোমাদের একটা গল্প শোনাই। গল্পটা ব্যর্থ হওয়ার ভয় নিয়ে। একদা আসান চাহ নামের এক সন্ন্যাসী এক টুকরো জমি পেয়েছিলেন। হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রেই। তো জমিটা পাওয়ার পর তিনি ভাবলেন এখানে সন্ন্যাসীদের জন্য একটা আশ্রম বানাবেন। ভাবনা অনুযায়ী তিনি তাঁর এক শিষ্যকে আশ্রমের ভবন নির্মাণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর কয়েক মাসের জন্য দূরে কোথাও চলে গেলেন।
মাস পাঁচেক পর ফিরে এসে চাহ দেখলেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যদিও যাওয়ার সময় তিনি স্থানীয় স্থপতিদের মাধ্যমে কিছু কাজ এগিয়ে রাখার জন্য শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যা-ই হোক, ফিরে আসার পর ওই স্থপতিদের একজন চাহকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন প্রকল্পের কোন কাজটা আমাদের সবার আগে শুরু করা উচিত? কীভাবে আমরা এখন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারি?
উত্তরে চাহ বললেন, ‘ভালো কিছু করার ইচ্ছাই ভালো ফল বয়ে আনে। কথায় বলে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তোমার ভেতর যদি ভুল করার ভয় না থাকে, তবে তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে দ্রুত এবং ফলাফল হবে চমৎকার। অতএব সেই কাজটাই আগে শুরু করো, যেটা তোমার মন করতে বলে।’
অতএব, নতুন লেখকেরা, তোমরা তোমাদের জীবনের চলার পথকে সাহসের সঙ্গে পাড়ি দাও। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই ভয়ে ভীত হয়ো না, অন্যের সমালোচনাকে ভয় পেয়ো না। এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে একটা কথাই বলব, অতিরিক্ত আত্মসমালোচনায় নিজেকে পঙ্গু করে ফেলো না।
সূত্র: পাওলো কয়েলোর নিজস্ব ব্লগ। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন