বিশ্বকাপ
ফুটবলের সর্বোচ্চ ১৬টি গোলের রেকর্ড জার্মান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ
ক্লোসার। জন্ম ১৯৭৮ সালের ৯ জুন পোল্যান্ডে। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে সর্বাধিক
৫টি গোল করে গোল্ডেন বল লাভ করেছিলেন এই স্ট্রাইকার।
আমার বেড়ে ওঠা অনেকগুলো জায়গায়, অনেক ভাষার মাঝে। জন্ম আমার পোল্যান্ডে। পোল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহরে আমরা থাকতাম। সেই শহরের বাজারের মধ্যে আমার মন সব সময় পড়ে থাকত। আইসক্রিমওয়ালার ভ্যানের আশপাশেই আমি থাকতাম। আমি যদি আবার সেই আইসক্রিমওয়ালার ভ্যান থেকে আইসক্রিম কিনতে পারতাম! স্কুলমাঠে ফুটবল খেলা দিয়েই আমি প্রথম পায়ে ফুটবলের স্পর্শ পাই। কিন্তু ফুটবলের চেয়ে আইসক্রিম খাওয়াতেই ছিল আমার সব মনোযোগ। আইসক্রিমই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। ছোটবেলায় আর প্রিয় ছিল ফুটবল। সবকিছুতেই ফুটবলের আকর্ষণ।
মাসের পর মাস, দিনের পর দিন আমি সেই জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। একা একা কত যে অনুশীলন করেছি, তার কোনো হিসাব নেই। পাগলের মতো খেটেছি। বড় হয়ে আমি বাজি ধরেছিলাম, আমি বিশ্বকাপে গোল করবই। স্বপ্নের মতো এক অভিযাত্রায় সেই বাজিতে আমি জিতেছিলাম। তারপর তো আরো গোল করার সৌভাগ্য হয়েছে।
আমার পুরো পরিবার ছিল খেলাপাগল। মা ছিলেন পোল্যান্ডের জাতীয় হ্যান্ডবল দলের নিয়মিত সদস্য। আর বাবা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। আমি বাবার সঙ্গে আট বছর বয়সে জার্মানিতে পা রাখি। তখন আমি মাত্র দুটি জার্মান শব্দ জানতাম। ছোটবেলার বেশ কিছু সময় আমি ফ্রান্সে ছিলাম। আমি একসময় খুব ভালো ফরাসি বলতে পারতাম। যদিও এখন ভুলে গেছি। জার্মান শিখতে গিয়ে ফরাসি ভুলে যাই।
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমরা জার্মানি আসি। তখন আমি স্থানীয় এক ক্লাবে প্রশিক্ষণের ক্যাম্পের জন্য নাম নিবন্ধন করার সুযোগ পাই। সপ্তাহব্যাপী সেই প্রশিক্ষণ ছিল আমার জন্য অনন্য এক সুযোগ। কিন্তু বাবা-মা আমাকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আমি থেকে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পের প্রথম দিন সন্ধ্যায় কোচ আমাকে উৎসাহ দেন। তাঁর কথাতেই আমি মাঠের রাইট ব্যাক পজিশনে খেলা শুরু করি।
আমি এমন একটি পরিবেশে বড় হই, যেখানে ফুটবলে ছিল আমার সব মনোযোগ। জার্মানিতে আসার পর আমি ভাষা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ি। কাউকে কিছু বোঝাতে পারতাম না। কিন্তু ফুটবল মাঠের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। সেখানে ফুটবলই ভাষা। সেই ভাষাতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। বাবা ছিলেন তাঁর ক্লাবে জনপ্রিয় ফুটবলার। আমি সেই বাবার ছেলে হয়ে ফুটবল না খেললে হয়? তাই তো আমার ফুটবল জগতে আগমন। পোল্যান্ডে থাকলে হয়তো আমি বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতাম। মাকে দেখে আমার তখন বাস্কেটবল ভালো লাগত। কিন্তু সময়ের আবর্তে আমি ফুটবলার। জার্মান ভাষা না-জানা সেই ছেলেটি এখন জার্মান ফুটবল দলে খেলে। সত্যিই তাই, ফুটবলের তো কোনো ভাষা নেই, ফুটবলের ভাষা সর্বজনীন।
আমি ২১ বছর বয়সে প্রথম পেশাদার ফুটবল ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি বুন্দেসলিগায় খেলার সুযোগ পাই। প্রথম মৌসুমেই বেশ কিছু গোল করি। আমার খেলা দেখে পোল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ সেখানে খেলতে বলেন। কিন্তু আমার তো তখন জার্মান পাসপোর্ট ছিল। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আমি জার্মানির হয়ে খেলব। জার্মানি না পোল্যান্ড—কোন দলে খেলব? এটা ছিল আমার জন্য পাহাড় পার হওয়ার মতন একটি পরিস্থিতি। ইচ্ছে করলে আমি পোল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেতাম কিন্তু আমার লক্ষ্যই ছিল জার্মানি। অবশেষে আমি জার্মানির জার্সি পরে মাঠে নামার সুযোগ পাই। ২০০১ সালে আলবেনিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচে আমি ৭৩ মিনিটে মাঠে নামি। এর পরের সময়টুকু ছিল স্বপ্নের মতন। আমার দেওয়া গোলে জার্মানি জিতে যায়। জার্মানির জার্সি পরে আমি প্রথম ১১ ম্যাচে তিনটি হ্যাটট্রিক করি। সেই ছিল আমার শুরু। তারপর সব এখন ইতিহাস।
তথ্যসূত্র: বিল্ড ও জ্যাইট ম্যাগাজিনকে দেওয়া ক্লোসার সাক্ষাৎকার, ২০১৪।
ক্লোসার লেখাটি লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান
আমার বেড়ে ওঠা অনেকগুলো জায়গায়, অনেক ভাষার মাঝে। জন্ম আমার পোল্যান্ডে। পোল্যান্ডের ছোট্ট একটি শহরে আমরা থাকতাম। সেই শহরের বাজারের মধ্যে আমার মন সব সময় পড়ে থাকত। আইসক্রিমওয়ালার ভ্যানের আশপাশেই আমি থাকতাম। আমি যদি আবার সেই আইসক্রিমওয়ালার ভ্যান থেকে আইসক্রিম কিনতে পারতাম! স্কুলমাঠে ফুটবল খেলা দিয়েই আমি প্রথম পায়ে ফুটবলের স্পর্শ পাই। কিন্তু ফুটবলের চেয়ে আইসক্রিম খাওয়াতেই ছিল আমার সব মনোযোগ। আইসক্রিমই ছিল ধ্যান-জ্ঞান। ছোটবেলায় আর প্রিয় ছিল ফুটবল। সবকিছুতেই ফুটবলের আকর্ষণ।
মাসের পর মাস, দিনের পর দিন আমি সেই জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। একা একা কত যে অনুশীলন করেছি, তার কোনো হিসাব নেই। পাগলের মতো খেটেছি। বড় হয়ে আমি বাজি ধরেছিলাম, আমি বিশ্বকাপে গোল করবই। স্বপ্নের মতো এক অভিযাত্রায় সেই বাজিতে আমি জিতেছিলাম। তারপর তো আরো গোল করার সৌভাগ্য হয়েছে।
আমার পুরো পরিবার ছিল খেলাপাগল। মা ছিলেন পোল্যান্ডের জাতীয় হ্যান্ডবল দলের নিয়মিত সদস্য। আর বাবা ছিলেন পেশাদার ফুটবলার। আমি বাবার সঙ্গে আট বছর বয়সে জার্মানিতে পা রাখি। তখন আমি মাত্র দুটি জার্মান শব্দ জানতাম। ছোটবেলার বেশ কিছু সময় আমি ফ্রান্সে ছিলাম। আমি একসময় খুব ভালো ফরাসি বলতে পারতাম। যদিও এখন ভুলে গেছি। জার্মান শিখতে গিয়ে ফরাসি ভুলে যাই।
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমরা জার্মানি আসি। তখন আমি স্থানীয় এক ক্লাবে প্রশিক্ষণের ক্যাম্পের জন্য নাম নিবন্ধন করার সুযোগ পাই। সপ্তাহব্যাপী সেই প্রশিক্ষণ ছিল আমার জন্য অনন্য এক সুযোগ। কিন্তু বাবা-মা আমাকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আমি থেকে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পের প্রথম দিন সন্ধ্যায় কোচ আমাকে উৎসাহ দেন। তাঁর কথাতেই আমি মাঠের রাইট ব্যাক পজিশনে খেলা শুরু করি।
আমি এমন একটি পরিবেশে বড় হই, যেখানে ফুটবলে ছিল আমার সব মনোযোগ। জার্মানিতে আসার পর আমি ভাষা নিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ি। কাউকে কিছু বোঝাতে পারতাম না। কিন্তু ফুটবল মাঠের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। সেখানে ফুটবলই ভাষা। সেই ভাষাতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। বাবা ছিলেন তাঁর ক্লাবে জনপ্রিয় ফুটবলার। আমি সেই বাবার ছেলে হয়ে ফুটবল না খেললে হয়? তাই তো আমার ফুটবল জগতে আগমন। পোল্যান্ডে থাকলে হয়তো আমি বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতাম। মাকে দেখে আমার তখন বাস্কেটবল ভালো লাগত। কিন্তু সময়ের আবর্তে আমি ফুটবলার। জার্মান ভাষা না-জানা সেই ছেলেটি এখন জার্মান ফুটবল দলে খেলে। সত্যিই তাই, ফুটবলের তো কোনো ভাষা নেই, ফুটবলের ভাষা সর্বজনীন।
আমি ২১ বছর বয়সে প্রথম পেশাদার ফুটবল ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি বুন্দেসলিগায় খেলার সুযোগ পাই। প্রথম মৌসুমেই বেশ কিছু গোল করি। আমার খেলা দেখে পোল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ সেখানে খেলতে বলেন। কিন্তু আমার তো তখন জার্মান পাসপোর্ট ছিল। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আমি জার্মানির হয়ে খেলব। জার্মানি না পোল্যান্ড—কোন দলে খেলব? এটা ছিল আমার জন্য পাহাড় পার হওয়ার মতন একটি পরিস্থিতি। ইচ্ছে করলে আমি পোল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেতাম কিন্তু আমার লক্ষ্যই ছিল জার্মানি। অবশেষে আমি জার্মানির জার্সি পরে মাঠে নামার সুযোগ পাই। ২০০১ সালে আলবেনিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচে আমি ৭৩ মিনিটে মাঠে নামি। এর পরের সময়টুকু ছিল স্বপ্নের মতন। আমার দেওয়া গোলে জার্মানি জিতে যায়। জার্মানির জার্সি পরে আমি প্রথম ১১ ম্যাচে তিনটি হ্যাটট্রিক করি। সেই ছিল আমার শুরু। তারপর সব এখন ইতিহাস।
তথ্যসূত্র: বিল্ড ও জ্যাইট ম্যাগাজিনকে দেওয়া ক্লোসার সাক্ষাৎকার, ২০১৪।
ক্লোসার লেখাটি লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন