বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

চলো সবার জন্য সমাজ গড়ি

একটি হুইল চেয়ারের অভাবে থেমে আছে কারও জীবন। আবার কেউবা চার দেয়ালের আলো-আঁধারিতে বন্দী, সহায়ক চলাচলের ব্যবস্থা নেই বলে। এসব শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না সাবরিনা সুলতানা। নিজে প্রতিবন্ধী মানুষ, তাই যেন খবরগুলো তাঁদেরই তাড়িত করে।
সাবরিনা একদিন শুরু করলেন ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে সচেতনতার কাজ। সঙ্গী হলেন সালমা মাহবুব। গঠন করলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস সংক্ষেপে বি-স্ক্যান। যাদের লক্ষ্য দেশের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, যাতায়াত ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিতে জনসচেতন করা।
বি-স্ক্যান সম্পর্কে সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘এ দেশের প্রতিবন্ধী মানুষ যে জীবন এত দিন কাটিয়ে এসেছেন, আমরা তার পরিবর্তন আনতে চাই জনসচেতনতার মাধ্যমে। কারণ, আমরা মনে করি সমাজে ব্যক্তির আচরণই আমাদের প্রথম প্রতিবন্ধকতা; এই বাধা দূর করতে হবে। আমরা স্বপ্ন দেখি প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর একটি সুন্দর ভবিষ্যতের।’
প্রতিবন্ধী মানুষদের সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে সংগঠনটি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। সচেতনতামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাঙ্গনে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, হুইলচেয়ার র্যা লি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যা ম্পযুক্ত প্রবেশগম্য বাসের নকশা বানানোর প্রতিযোগিতার আয়োজন, প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে প্রচারণার লক্ষ্যে প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি, সেমিনার আয়োজন ইত্যাদি। তাঁরা সচেতনতা তৈরির এই কার্যক্রমে সফলও হয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যেমন জাতীয় জাদুঘর, কক্সবাজারে হোটেল সিলভার শাইন, চট্টগ্রাম সমিতি ভবন-ঢাকা প্রবেশগম্যতা, শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন স্টেডিয়ামে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য টিকিটের প্রচলন, সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ম্যানুয়েল লিফট স্থাপনসহ জাতীয়ভাবে নীতিনির্ধারণী নানা ফোরামে রেখেছে অবদান।
শুধু সচেতনতা নয়, প্রতিবন্ধী মানুষকে স্বনির্ভর করতে পরিচালনা করছে নানা কার্যক্রম। এর মধ্যে আছে মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করেছে শিক্ষা বৃত্তির। আবার বি-স্ক্যানের উদ্যোগে একাডেমি ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্সের (এএমএস) প্রতি সেশনে দুজন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বল্পমূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার সহায়ক উপকরণ প্রদান হুইলচেয়ার, ক্রাচ, হিয়ারিং এইড, ট্রাইসাইকেল ইত্যাদি দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণ, সেলাই মেশিন ইত্যাদিও প্রদান করা হয়। ব্যবসায় সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রচলন করা হয়েছে সুদমুক্ত ঋণ।
সাবরিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রথমত একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার পরিবারকে নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। প্রতিবন্ধিতা মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়, বরং তার মাঝে সুপ্ত থাকা প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বিক উন্নতি সম্ভব।’
প্রতিবন্ধী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে বি-স্ক্যান ২০১২ সাল থেকে প্রকাশ করছে ত্রৈমাসিক পত্রিকা ট্যাবলয়ড অপরাজেয়। এই প্রকাশনার মাধ্যমে বি-স্ক্যান চেষ্টা করছে প্রতিবন্ধী মানুষের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে প্রতিবন্ধী মানুষের দ্বারা পরিচালিত সংগঠনগুলোকে (ডিপিও) একত্র ও সুসংগঠিত করে সমন্বিতভাবে কাজ করার।
অপরাজেয়র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যান্ড দল জলের গান ও প্রতিবন্ধী শিল্পীদের অংশগ্রহণে বি-স্ক্যান আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
‘চলো সবাই, একীভূত সমাজ গড়ি’ এই স্লোগান নিয়ে আয়োজনটি হবে ৮ জানুয়ারি বিকেল তিনটায় রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^