বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

চাই সবার জন্য ইন্টারনেট

সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ‘ফেসবুক’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ১৯৮৪ সালের ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। মার্ক ২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর সম্পদমূল্য ৩৩.১ বিলিয়ন ডলার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রপ আউট তিনি। সারা বিশ্বের মানুষকে ইন্টারনেট সংযোগে আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন মার্ক। সম্প্রতি ভারত সফরে ৯ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে তিনি এই বক্তব্য দেন।
সবাইকে ধন্যবাদ। নয়াদিল্লিতে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি, উদ্ভাবন আর আবিষ্কারই পৃথিবী বদলে দিয়েছে। টেলিফোন, প্রিন্টিং প্রেস, টেলিভিশন, রেডিও, রেলওয়ে, অটোমোবাইল—সব উদ্ভাবন আমাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে আমাদের সমাজ। মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়িয়েছে এই আবিষ্কারগুলো। যখন অনেক মানুষ একত্র হয়, তখনো অনেক চমৎকার বিস্ময়কর কাজ করা যায়। সংযোগ ঘটলেই আমরা মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি, নতুন তথ্য অনুসন্ধান করতে পারি। সংযোগ হলেই নতুন কর্মক্ষেত্র, সুযোগ আর ধারণার খোঁজ পেতে পারি। প্রযুক্তি কখনোই একা উন্নত হতে পারে না। প্রযুক্তির বিকাশ পুরো সমাজব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। ইন্টারনেট সংযোগ শুধু মুষ্টিমেয় ধনী কিংবা শক্তিশালী মানুষের জন্য নির্দিষ্ট হতে পারে না। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত সুযোগ।
আমরা এ বছরের জুলাই মাসে এয়ারটেলের সহযোগিতায় জাম্বিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ চালু করি। এর ফলে প্রথমবারের মতো কয়েক লাখ মানুষ উইকিপিডিয়া, গুগল ও স্থানীয় সংবাদ-তথ্যগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের অনেকগুলো খবর জানতে পারি। আমরা এক মায়ের খোঁজ পাই যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার গর্ভাবস্থা ও সন্তানের পরিচর্যার তথ্য জানতে পেরেছিলেন। আমরা এক বয়স্ক মানুষের সন্ধান পাই যিনি আগে বাড়ির কাছের লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়তেন, এখন তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই বই পড়েন। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এখন উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে পড়াশোনা করে। যার ফলে সময় আর অর্থ দুটোই বেশ সাশ্রয় হয়। এখন খুব স্বল্প সময়ে নিমেষেই তথ্য পাওয়া যায়।
প্রযুক্তির ব্যবহার যখন পুরো সমাজে ছড়িয়ে যাবে তখন আমরা বড় আকারের পরিবর্তনের দেখা পাব। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তন। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারত খুব দ্রুত নানা সময়ে এগিয়ে গেছে। গত মাসে ভারত মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে তার নভো-খেয়াযান প্রেরণ করেছে, যা অনন্য একটি ঘটনা। এটা নিশ্চয়ই প্রযুক্তিগত বিশাল একটি অর্জন।
বিজ্ঞান, শিক্ষা আর গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলেই এমন অসাধ্য সাধন হয়েছে। এখন এর সঙ্গে ইন্টারনেটকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে অনেক মানুষের জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে সারা পৃথিবীর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ আছে। আর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এখনো ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে। বর্তমানে ২.৭ বিলিয়নের মতো মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। আর ৪.৪ বিলিয়ন মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। এদের মধ্যে ৩.৪ বিলিয়ন মানুষের বাস মাত্র ২০টি দেশে, উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতেই তাদের বসবাস।
ভারতে ২৪ কোটির মতো মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। এখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু তার পরও ভারতে কোটি কোটি মানুষ আছে যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না।
গত ১০ বছরে ফেসবুকে পৃথিবীবাসীকে আরও সংযুক্ত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, কানেকটিভিটি হচ্ছে মানবাধিকার। আমাদের এই প্রজন্মের মানুষদের পৃথিবীকে সংযুক্ত করাই বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জের কাজ। ইন্টারনেট যেন সবাই ব্যবহার করতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। গত বছর আমরা ইন্টারনেট ডট অর্গ (internet.org) প্রতিষ্ঠা করি। যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে একত্র করে মানুষের জন্য প্রাথমিক ইন্টারনেট সংযোগ সেবা প্রদানের চেষ্টা করছি। গত বছর আমরা ৩০ লাখ মানুষকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসি। এটা আমাদের শুরু মাত্র। আমাদের সামনে অনেক সমস্যা আর বাধা আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট সেবার সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমাদের এসব বাধা দূর করতেই হবে। আমেরিকায় ৯১১ নম্বরে ফোন করলে টাকা থাকুক না থাকুক আপনি সাহায্য পাবেন। এমনই একটি পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ করছি, যার মাধ্যমে মানুষ মৌলিক ইন্টারনেট সেবা খুব সহজে পেতে পারে।
নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক বাধা আছে আমাদের সামনে। সবচেয়ে বড় বাধাটি হচ্ছে সামাজিক। অনেক সমাজে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে আছে ভীতি। পুরুষদের তুলনায় নারীদের ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুপাত অনেক কম।
বেশির ভাগ মানুষই জানে না কেন তাদের জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন। ইন্টারনেট ব্যবহার কেন বাস্তবতা, সেটা তারা জানে না। মানুষকে যখন ইন্টারনেটের গুরুত্ব বোঝানো যাবে, তখনই তারা ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন অনুভব করবে।
ইন্টারনেটে স্থানীয় ভাষার বেশ অভাব আছে। ইন্টারনেটের ৮০ ভাগ তথ্য মাত্র ১০টি ভাষায় প্রকাশিত হয়। স্থানীয় ভাষায় তথ্য ও কন্টেন্টের অভাব চোখে পড়ার মতো। আমাদের ইন্টারনেট সংযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে।
সারা পৃথিবীকে এক করা কোনো এক প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় মানুষকে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমাদের প্রজন্মের জন্য সারা বিশ্বকে এক করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নের প্রচেষ্টা সব সময়ের জন্য বেশ কঠিন। কিন্তু সবাই একসঙ্গে কাজ করলে বড় বাধা দূর করা সম্ভব। বাধা অতিক্রম করে সারা বিশ্বকে আমরা এক করবই। আমার প্রত্যাশা সবাই আমাদের সঙ্গে থাকবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি ভিডিও আর্কাইভ। ৯ অক্টোবর ২০১৪ ভারতের নয়াদিল্লিতে ইন্টারনেট ডট অর্গ (internet.org) সামিটে দেওয়া বক্তব্য থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: জাহিদ হোসাইন খান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^