কালো
ব্যাকগ্রাউন্ড, মাঝে একটি রকেট। রকেটটির নিচ দিয়ে জ্বলন্ত আগুনের
স্ফুলিঙ্গ। সেটার ভেতরে বসে আছি আমি। চারদিকে জ্বলজ্বলে অসংখ্য তারা।
দু-একটি গ্রহ—এই ছিল ছোটবেলায় ‘আমার স্বপ্ন’ শীর্ষক আঁকা কোনো ছবি। সেই
ছবি যে বাস্তবে রূপ নেবে, তা কি কখনো জানতাম?
স্বপ্ন পূরণের সুযোগ হয়েছিল ৬–১৮ সেপ্টেম্বর। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৬ শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক ঘুরে আসি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই সফরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস ও মাজেদা বেগমের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের দলে আমিসহ ছিলাম অহর্নিশ অহনা, কাজী সানজিদা জামান, নেহরীন আহমেদ, সুমাইয়া রশিদ, সাবিহা অরনা, ফারহীন ফারনাজ, জাইমা হামিদ, ফাতেহা জান্নাত, জামালিয়া সুলতানা, মায়িশা তাসনীম, রামিসা বিলকিস, ফওজিয়া আফরিন, তাসফিয়া মাইশা, নওশিন তাবাসসুম ও তাসফিয়া হাসিন।
৭ সেপ্টেম্বর প্রায় ২৩ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। সকাল বেলা পৌঁছে গেলাম অ্যাস্ট্রোনটস হল অব ফেইমে, যেখানে আমাদের ‘অ্যাস্ট্রোনমি ট্রেইনিং এক্সপেরিয়েন্স’ বা ‘এটিএক্স’ নামের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রশিক্ষক ছিলেন চারজন। প্রশিক্ষক রেডহোলিকা আমাদের প্রথমে নিয়ে গেলেন একটি অরবিটারে। মই দিয়ে ওপরে উঠে দেখি অসংখ্য বোতাম, সুইচ, ১০-১২টা স্ক্রিন, সামনে দুটি আসন—পাইলট ও কমান্ডারের। পাইলটের আসনে বসে কিছু বোতাম স্পর্শ করলাম ও ছবি তুললাম। কমান্ডারের সামনে কন্ট্রোল বারটিও নেড়েচেড়ে দেখলাম। রেডহোলিকা আমাদের অরবিটারে মহাকাশচারীদের কার্যক্রম, থাকা, খাওয়া ও ঘুমানোর জায়গা দেখালেন। এত ছোট জায়গায় স্লিপিং ব্যাগে কীভাবে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে হয়, তাও জেনে নিলাম। রেডহোলিকা আমাদের শিখিয়ে দিলেন কীভাবে রকেট ওড়াতে ও অবতরণ করাতে হয়। এরপর র্যাড আমাদের বিভিন্ন কাজে ভাগ করে দিলেন। আমরা পাঁচজন গেলাম কন্ট্রোল রুমে। আমি ছিলাম পিএও অর্থাৎ পিপল অ্যাফেয়ার অফিসার। কাজ, পুরো মিশনের সবকিছুর বর্ণনা দেওয়া। হাতে স্ক্রিপ্ট। কানে হেডফোন। টিভি স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছিলাম পাইলট ও কমান্ডারকে। সবাই প্রস্তুত। শুরু হলো কাউন্টডাউন—ফাইভ, ফোর, থ্রি...। মিশন শুরু হয়ে গেছে। আমি ঘোষণা করলাম, দিস ইজ বিন্তি... ফ্রম কেনেডি স্পেস সেন্টার...।
উত্তেজনাপূর্ণ মিশনে সবাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করল। সবার কাজই পূর্বনির্ধারিত। এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক তাকানোর সুযোগ নেই। সফলভাবে সবকিছু শুরু হলো। কিন্তু মহাকাশে রকেট অবতরণ করানোর সময় ঘটল যত বিপত্তি। প্রথমবার যা হয় আর কি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য অরবিটার ক্র্যাশ করল। এসবই ছিল অরবিটারের ভেতর একটা খেলা! আমি মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম।
কন্ট্রোল রুম থেকে বের হয়ে আমরা উঠলাম গ্র্যাভিটি স্পিনে, যেখানে সাতটি অক্ষে চক্রাকারে ঘোরানো হয়। এরপর শূন্য মহাকর্ষের (জিরো গ্র্যাভিটি) স্বাদ নিলাম। হাত ব্যবহার করে পায়ের সাহায্য ছাড়াই ‘হেঁটে’ চলার অভিজ্ঞতা হলো। মহাকাশে যেহেতু সবকিছুই ভাসমান, তাই এ প্রশিক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবেই মহাশূন্যচারীদের নিতে হয়। অন্য রকম এক অনুভূতি! নিজেকে সত্যিই মহাশূন্যচারী মনে হচ্ছিল৷
এরপর আমাদের হাতে বিখ্যাত নভোচারী ডন থমাসের স্বাক্ষর করা সনদ তুলে দেওয়া হলো। করতালিতে হলরুম মুখরিত।
প্রথম দিন শেষে দ্বিতীয় দিন পৌঁছে গেলাম নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। ঢুকতেই জন এফ কেনেডির উক্তিসহ স্মৃতিস্তম্ভ। পাশেই নাসার বিখ্যাত লোগো, যেটি পৃথিবীর সাড়া জাগানো সব মিশনের মহাকাশযানে দেখা যায়। সৌভাগ্য হয়েছিল নভোচারী ডন থমাসের সঙ্গে দুপুরে খাবার খাওয়ার। প্রথমেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। খাবার খেতে খেতে তিনি তাঁর মিশনের বিভিন্ন ছবি দেখালেন। তাঁর সঙ্গে ছবি তুললাম ও অটোগ্রাফ নিলাম।
এরপর রকেট গার্ডেন ঘুরে দেখলাম। ‘আরলি স্পেস এক্সপ্লোরেশন’–এ দেখতে পেলাম সেসব যান, যেগুলো নিয়ে মানুষ চাঁদে গিয়েছিল, মঙ্গলের পথে পাড়ি জমিয়েছিল। একবার স্পর্শও করলাম। জেমিনি স্পেস স্যুট, লুনার স্পেস এলিভেটর, অ্যাপোলো স্পেস স্যুট—সবকিছুই দেখলাম।
বাইরে এসে দেখতে পেলাম স্পেস শাটল আটলান্টিসকে। বিভিন্ন মিশনের বিভিন্ন মডেলের স্পেস শাটল ও অরবিটার নাসাতে সংরক্ষণ করা আছে। এরপর কেনেডি স্পেস সেন্টারে ভিজিটর কমপ্লেক্সটা বাসে চড়ে ঘুরে দেখলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন একজন গাইড। নাসার হেড অফিসের সামনে দিয়ে আমাদের বাস চলে গেল। দেখতে পেলাম সেই প্ল্যাটফর্মগুলো, যেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব মিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল; রকেটগুলো ছুটেছিল মহাকাশের পানে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে ১৮ সেপ্টেম্বর ফিরে এলাম প্রিয় বাংলাদেশে।
স্বপ্ন পূরণের সুযোগ হয়েছিল ৬–১৮ সেপ্টেম্বর। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৬ শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক ঘুরে আসি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই সফরে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস ও মাজেদা বেগমের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের দলে আমিসহ ছিলাম অহর্নিশ অহনা, কাজী সানজিদা জামান, নেহরীন আহমেদ, সুমাইয়া রশিদ, সাবিহা অরনা, ফারহীন ফারনাজ, জাইমা হামিদ, ফাতেহা জান্নাত, জামালিয়া সুলতানা, মায়িশা তাসনীম, রামিসা বিলকিস, ফওজিয়া আফরিন, তাসফিয়া মাইশা, নওশিন তাবাসসুম ও তাসফিয়া হাসিন।
৭ সেপ্টেম্বর প্রায় ২৩ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। সকাল বেলা পৌঁছে গেলাম অ্যাস্ট্রোনটস হল অব ফেইমে, যেখানে আমাদের ‘অ্যাস্ট্রোনমি ট্রেইনিং এক্সপেরিয়েন্স’ বা ‘এটিএক্স’ নামের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রশিক্ষক ছিলেন চারজন। প্রশিক্ষক রেডহোলিকা আমাদের প্রথমে নিয়ে গেলেন একটি অরবিটারে। মই দিয়ে ওপরে উঠে দেখি অসংখ্য বোতাম, সুইচ, ১০-১২টা স্ক্রিন, সামনে দুটি আসন—পাইলট ও কমান্ডারের। পাইলটের আসনে বসে কিছু বোতাম স্পর্শ করলাম ও ছবি তুললাম। কমান্ডারের সামনে কন্ট্রোল বারটিও নেড়েচেড়ে দেখলাম। রেডহোলিকা আমাদের অরবিটারে মহাকাশচারীদের কার্যক্রম, থাকা, খাওয়া ও ঘুমানোর জায়গা দেখালেন। এত ছোট জায়গায় স্লিপিং ব্যাগে কীভাবে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে হয়, তাও জেনে নিলাম। রেডহোলিকা আমাদের শিখিয়ে দিলেন কীভাবে রকেট ওড়াতে ও অবতরণ করাতে হয়। এরপর র্যাড আমাদের বিভিন্ন কাজে ভাগ করে দিলেন। আমরা পাঁচজন গেলাম কন্ট্রোল রুমে। আমি ছিলাম পিএও অর্থাৎ পিপল অ্যাফেয়ার অফিসার। কাজ, পুরো মিশনের সবকিছুর বর্ণনা দেওয়া। হাতে স্ক্রিপ্ট। কানে হেডফোন। টিভি স্ক্রিনে দেখতে পাচ্ছিলাম পাইলট ও কমান্ডারকে। সবাই প্রস্তুত। শুরু হলো কাউন্টডাউন—ফাইভ, ফোর, থ্রি...। মিশন শুরু হয়ে গেছে। আমি ঘোষণা করলাম, দিস ইজ বিন্তি... ফ্রম কেনেডি স্পেস সেন্টার...।
উত্তেজনাপূর্ণ মিশনে সবাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করল। সবার কাজই পূর্বনির্ধারিত। এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক তাকানোর সুযোগ নেই। সফলভাবে সবকিছু শুরু হলো। কিন্তু মহাকাশে রকেট অবতরণ করানোর সময় ঘটল যত বিপত্তি। প্রথমবার যা হয় আর কি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য অরবিটার ক্র্যাশ করল। এসবই ছিল অরবিটারের ভেতর একটা খেলা! আমি মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম।
কন্ট্রোল রুম থেকে বের হয়ে আমরা উঠলাম গ্র্যাভিটি স্পিনে, যেখানে সাতটি অক্ষে চক্রাকারে ঘোরানো হয়। এরপর শূন্য মহাকর্ষের (জিরো গ্র্যাভিটি) স্বাদ নিলাম। হাত ব্যবহার করে পায়ের সাহায্য ছাড়াই ‘হেঁটে’ চলার অভিজ্ঞতা হলো। মহাকাশে যেহেতু সবকিছুই ভাসমান, তাই এ প্রশিক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবেই মহাশূন্যচারীদের নিতে হয়। অন্য রকম এক অনুভূতি! নিজেকে সত্যিই মহাশূন্যচারী মনে হচ্ছিল৷
এরপর আমাদের হাতে বিখ্যাত নভোচারী ডন থমাসের স্বাক্ষর করা সনদ তুলে দেওয়া হলো। করতালিতে হলরুম মুখরিত।
প্রথম দিন শেষে দ্বিতীয় দিন পৌঁছে গেলাম নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। ঢুকতেই জন এফ কেনেডির উক্তিসহ স্মৃতিস্তম্ভ। পাশেই নাসার বিখ্যাত লোগো, যেটি পৃথিবীর সাড়া জাগানো সব মিশনের মহাকাশযানে দেখা যায়। সৌভাগ্য হয়েছিল নভোচারী ডন থমাসের সঙ্গে দুপুরে খাবার খাওয়ার। প্রথমেই তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। খাবার খেতে খেতে তিনি তাঁর মিশনের বিভিন্ন ছবি দেখালেন। তাঁর সঙ্গে ছবি তুললাম ও অটোগ্রাফ নিলাম।
এরপর রকেট গার্ডেন ঘুরে দেখলাম। ‘আরলি স্পেস এক্সপ্লোরেশন’–এ দেখতে পেলাম সেসব যান, যেগুলো নিয়ে মানুষ চাঁদে গিয়েছিল, মঙ্গলের পথে পাড়ি জমিয়েছিল। একবার স্পর্শও করলাম। জেমিনি স্পেস স্যুট, লুনার স্পেস এলিভেটর, অ্যাপোলো স্পেস স্যুট—সবকিছুই দেখলাম।
বাইরে এসে দেখতে পেলাম স্পেস শাটল আটলান্টিসকে। বিভিন্ন মিশনের বিভিন্ন মডেলের স্পেস শাটল ও অরবিটার নাসাতে সংরক্ষণ করা আছে। এরপর কেনেডি স্পেস সেন্টারে ভিজিটর কমপ্লেক্সটা বাসে চড়ে ঘুরে দেখলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন একজন গাইড। নাসার হেড অফিসের সামনে দিয়ে আমাদের বাস চলে গেল। দেখতে পেলাম সেই প্ল্যাটফর্মগুলো, যেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সব মিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল; রকেটগুলো ছুটেছিল মহাকাশের পানে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে ১৮ সেপ্টেম্বর ফিরে এলাম প্রিয় বাংলাদেশে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন