ইন্টারনেটে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার
সহপ্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস। জন্ম ১৯৬৬ সালের ৭ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলা
উইকিপিডিয়ার এক দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি
এসেছিলেন ঢাকায়। উইকিমিডিয়া বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোন আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে
জিমি ওয়েলস এই বক্তব্য দেন।
আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি মানুষ বিনা মূল্যে মুক্তভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে পারবে। আর এই স্বপ্ন পূরণেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উইকিপিডিয়া প্রকল্পের এই উদ্যোগটা ছিল সারা বিশ্বের মানুষের কথা চিন্তা করে। প্রথম থেকেই আমরা ভেবেছি, আমাদের কাজটা যেন সবার কাছে পৌঁছায়। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত আদান-প্রদান হবে, তত মানুষের জীবন উন্নত হবে। আর তা যেন বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, সেটা নিয়েই আমরা ভাবছি।
উইকিপিডিয়া হচ্ছে একধরনের এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষ। এটা পাঠ্যবই বা ইউটিউব নয়। এখান থেকে যেমন তথ্য জানা যায়, ব্যবহার করা যায়, তেমনি নতুন তথ্য বা বিশেষ কোনো বিষয়বস্তু সংযোজন করা যায়। উইকিপিডিয়াতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ২০ লাখের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। পৃথিবীর ২৮৭টি ভাষায় উইকিপিডিয়া চালু হয়েছে। আর প্রতি মাসে আমাদের ওয়েবসাইট প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ ব্যবহার করে। উইকিপিডিয়াতে পৃথিবীর ১০টি ভাষাতেই রয়েছে প্রায় ১০ লাখ নিবন্ধ। বিভিন্ন ভাষায় লেখা নিবন্ধগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বাংলার মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধ রয়েছে বাংলা উইকিপিডিয়ায়।
এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে মানুষের সংখ্যা কম হলেও উইকিপিডিয়ার ব্যবহার বেশি। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ হচ্ছে আবহাওয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা, ব্রডব্যান্ড ও শিক্ষার হার।
উইকিপিডিয়াতে বিভিন্ন ভাষার নিবন্ধের পর্যালোচনার একটা গাণিতিক সূত্র রয়েছে। একে বলে ‘ডেপথ’ সূত্র। সেই হিসাব-নিকাশে বাংলা ভাষার স্থান তৃতীয়। প্রথম হলো ইংরেজি, দ্বিতীয় ম্যাসিডোনীয় ও তৃতীয় বাংলা ভাষা। তাই বাংলা উইকিপিডিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১০ কোটি মানুষ যদি প্রত্যেকে একটি লাইন করেও লেখে, তবে তা-ও কিন্তু কম নয়। এই অনলাইন বিশ্বকোষের দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ। আর মুক্ত লাইসেন্স হওয়ার কারণে অন্য অনেক ওয়েবসাইটের চেয়ে এর জনপ্রিয়তা বেশি। যেকোনো সমস্যা, কৌতূহল বা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উইকিপিডিয়া দারুণ একটা ওয়েবসাইট।
একটা প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়, উইকিপিডিয়া নিয়ে আমার স্বপ্ন কতদূর বিস্তৃত? আসলে বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে একধরনের আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো বলবে, মোবাইল ফোনের কারণে চাষিরা প্রতারকের কবলে কম পড়ছেন, ম্যালেরিয়া বা অন্যান্য অসুখের খবর দ্রুত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো যাচ্ছে ইত্যাদি। এসব অবশ্যই খুব সত্য। তবে বহু মানুষ আছে, যারা এখনো ইন্টারনেটের ব্যবহার জানে না। তারা জানে না মোবাইল ফোন ব্যবহারে আরও কত কত সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে সুযোগ ও টাকা—দুয়েরই অভাব রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের দাম কমছে, মোবাইল ফোনগুলোতে থ্রিজি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব দেশেই এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। তাই আগামী পাঁচ বছরে অবস্থা এমন থাকবে না। অনেক নতুন ব্যবহারকারী আসবে ইন্টারনেট জগতে। আর তারা আসবে বিপুল পরিমাণ আগ্রহ আর জীবন-জগৎ সম্পর্কে জানার কৌতূহল নিয়ে। তারা উইকিপিডিয়া ঘাঁটবে। তারা চাইবে তাদের মাতৃভাষাতে শিখতে ও জানতে। কারণ, এ মানুষগুলোর সবাই তো সমানভাবে ইংরেজিতে দক্ষ নয়। আর মাতৃভাষাতে তারা যেভাবে পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে—অন্য ভাষায় সেভাবে পারবে না। তাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাংলা উইকিপিডিয়া দরকার। স্থানীয় অনেক বিষয়বস্তুও বাংলা উইকিপিডিয়াতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তোমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/ জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর…’, উইকিপিডিয়ার দর্শনটা ঠিক অনেকটা এ রকম। এটাই উইকিপিডিয়ার মূল সুর।
সবাইকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন বাংলাদেশ উইকিপিডিয়া।
ইংরেজি থেকে নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: মারুফা ইসহাক
আমরা এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি মানুষ বিনা মূল্যে মুক্তভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে পারবে। আর এই স্বপ্ন পূরণেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উইকিপিডিয়া প্রকল্পের এই উদ্যোগটা ছিল সারা বিশ্বের মানুষের কথা চিন্তা করে। প্রথম থেকেই আমরা ভেবেছি, আমাদের কাজটা যেন সবার কাছে পৌঁছায়। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত আদান-প্রদান হবে, তত মানুষের জীবন উন্নত হবে। আর তা যেন বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, সেটা নিয়েই আমরা ভাবছি।
উইকিপিডিয়া হচ্ছে একধরনের এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষ। এটা পাঠ্যবই বা ইউটিউব নয়। এখান থেকে যেমন তথ্য জানা যায়, ব্যবহার করা যায়, তেমনি নতুন তথ্য বা বিশেষ কোনো বিষয়বস্তু সংযোজন করা যায়। উইকিপিডিয়াতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ২০ লাখের বেশি নিবন্ধ রয়েছে। পৃথিবীর ২৮৭টি ভাষায় উইকিপিডিয়া চালু হয়েছে। আর প্রতি মাসে আমাদের ওয়েবসাইট প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ ব্যবহার করে। উইকিপিডিয়াতে পৃথিবীর ১০টি ভাষাতেই রয়েছে প্রায় ১০ লাখ নিবন্ধ। বিভিন্ন ভাষায় লেখা নিবন্ধগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে বাংলার মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। প্রায় ৩৩ হাজার নিবন্ধ রয়েছে বাংলা উইকিপিডিয়ায়।
এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে মানুষের সংখ্যা কম হলেও উইকিপিডিয়ার ব্যবহার বেশি। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ হচ্ছে আবহাওয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা, ব্রডব্যান্ড ও শিক্ষার হার।
উইকিপিডিয়াতে বিভিন্ন ভাষার নিবন্ধের পর্যালোচনার একটা গাণিতিক সূত্র রয়েছে। একে বলে ‘ডেপথ’ সূত্র। সেই হিসাব-নিকাশে বাংলা ভাষার স্থান তৃতীয়। প্রথম হলো ইংরেজি, দ্বিতীয় ম্যাসিডোনীয় ও তৃতীয় বাংলা ভাষা। তাই বাংলা উইকিপিডিয়াকে আরও সমৃদ্ধ করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১০ কোটি মানুষ যদি প্রত্যেকে একটি লাইন করেও লেখে, তবে তা-ও কিন্তু কম নয়। এই অনলাইন বিশ্বকোষের দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ। আর মুক্ত লাইসেন্স হওয়ার কারণে অন্য অনেক ওয়েবসাইটের চেয়ে এর জনপ্রিয়তা বেশি। যেকোনো সমস্যা, কৌতূহল বা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উইকিপিডিয়া দারুণ একটা ওয়েবসাইট।
একটা প্রশ্ন আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়, উইকিপিডিয়া নিয়ে আমার স্বপ্ন কতদূর বিস্তৃত? আসলে বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনে একধরনের আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো বলবে, মোবাইল ফোনের কারণে চাষিরা প্রতারকের কবলে কম পড়ছেন, ম্যালেরিয়া বা অন্যান্য অসুখের খবর দ্রুত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো যাচ্ছে ইত্যাদি। এসব অবশ্যই খুব সত্য। তবে বহু মানুষ আছে, যারা এখনো ইন্টারনেটের ব্যবহার জানে না। তারা জানে না মোবাইল ফোন ব্যবহারে আরও কত কত সম্ভাবনা রয়েছে।
এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে সুযোগ ও টাকা—দুয়েরই অভাব রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে স্মার্টফোনের দাম কমছে, মোবাইল ফোনগুলোতে থ্রিজি পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সব দেশেই এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। তাই আগামী পাঁচ বছরে অবস্থা এমন থাকবে না। অনেক নতুন ব্যবহারকারী আসবে ইন্টারনেট জগতে। আর তারা আসবে বিপুল পরিমাণ আগ্রহ আর জীবন-জগৎ সম্পর্কে জানার কৌতূহল নিয়ে। তারা উইকিপিডিয়া ঘাঁটবে। তারা চাইবে তাদের মাতৃভাষাতে শিখতে ও জানতে। কারণ, এ মানুষগুলোর সবাই তো সমানভাবে ইংরেজিতে দক্ষ নয়। আর মাতৃভাষাতে তারা যেভাবে পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে—অন্য ভাষায় সেভাবে পারবে না। তাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য বাংলা উইকিপিডিয়া দরকার। স্থানীয় অনেক বিষয়বস্তুও বাংলা উইকিপিডিয়াতে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
তোমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,/ জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর…’, উইকিপিডিয়ার দর্শনটা ঠিক অনেকটা এ রকম। এটাই উইকিপিডিয়ার মূল সুর।
সবাইকে ধন্যবাদ। অভিনন্দন বাংলাদেশ উইকিপিডিয়া।
ইংরেজি থেকে নির্বাচিত অংশের অনুবাদ: মারুফা ইসহাক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন