বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা অনেক
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কজনের কাছ থেকে শোনা
যাক প্রবাসে ঈদের আনন্দ-বেদনার গল্প।
রান্না করি, দাওয়াত দিই
ঈদের দিনটা সাপ্তাহিক ছুটির দিন না হলে ক্লাস শেষে বন্ধুরা একসঙ্গে ঘুরতে বের হই। বেশির ভাগ সময় ইনডোর গেমস ‘বোলিং’ খেলতে যাই। রাতে বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে রুমে ফিরি। আমার জন্য ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলো, বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে নিজে রান্না করে খাওয়াই। দেশি পোলাও-মাংস খেয়ে তারা যখন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে, তখন বেশ মজা পাই।
সারা দিনের ছোটাছুটিতে অনেক কিছু ভুলে থাকি—মায়ের হাতের রান্না, চট্টগ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি। আর তখন একমাত্র সম্বল স্কাইপ আর ফেসবুকের কল্যাণে সবার সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করি। জীবনের ব্যস্ততায় বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এভাবে প্রবাসে ঈদ উদ্যাপনের সমাপ্তি ঘটে। দেশের সবার প্রতি রইল ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সবাইকে ঈদ মোবারক।
মাহবুবুর রহমান
স্পেস সায়েন্স বিভাগ, স্কলটেক ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স ও টেকনোলজি, রাশিয়া
বিদেশে বাঙালিপনাকানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহর খুবই সুন্দর। কিন্তু এত সুন্দরের মধ্যে থেকেও সাগর আর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ছুটে চলা বাসে বসে মন পড়ে থাকে ভিড়ে ঠাসাঠাসি ঢাকা শহরের রাস্তায়। ঈদে এখানে কোনো ছুটি নেই, তাই যথারীতি ব্যস্ততা থাকবেই। তার পরও কাজের শেষে এখানকার বাঙালি বন্ধুদের কারও বাসায় সবাই একসঙ্গে হব, আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া হবে। সত্যি বলতে কি, দেশ থেকে দূরে থেকেও বাঙালিপনা থেকে আমরা কিন্তু দূরে নেই একটুও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি শিক্ষার্থীদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আর দেশের প্রায় প্রতিটি পালা-পার্বণ খুব ঘটা করে উদ্যাপন করি আমরা। প্রতিবছরই এখানে নতুন নতুন বাঙালি শিক্ষার্থী আসে। অল্প সময়েই পুরোনোদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠা নতুন পরিচিত এসব মানুষের সঙ্গেই এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।
বেনজীর শামস
স্কুল অব পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ,
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা
ব্যস্ত ঈদ
বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঈদ আসে ক্ষণিকের আনন্দ নিয়ে। ২০১৩ থেকে আছি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। আসার দুই মাস পরই ঈদ। ঈদের দিনেও রেগুলার ক্লাস। ক্লাস শেষে আবার ল্যাব। মন খারাপ করে যখন কাজ করছি, তখন ল্যাব সুপারভাইজার পলা জিজ্ঞাসা করল, কী ব্যাপার, মন খারাপ কেন? আমি বললাম, আজ আমাদের ঈদ উৎসবের দিন। পলা তা শুনে আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়।
এরপর রাতে এক বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে মোলাকাত, আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিয়েছিল বাঙালি ঈদের আমেজ।
নেসার খাদেম
এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
অন্য রকম ঈদআমি এমএসসি করতে বেলজিয়ামে এসেছি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এর মধ্যেই বিদেশে প্রথম ঈদ করার অভিজ্ঞতা হলো আমার। এখানে ঈদের দিনটা কেটেছে আমার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা ক্লাস করতে করতে। প্রফেসর টমকে মনে মনে গালি দিতে দিতে কোনো রকমে পার করলাম দিনটা। সারা দিন ক্লাসের চাপ আর দেশে মন ভরে কথা বলতে না পারার কষ্টে ‘আমার ঈদ শেষ’ টাইপের চিন্তা নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। ঠিক তখনই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়! শিখা আপুর করা দুধ পোলাও, আফরোজা আপুর বিফ কারি, জাকারিয়া ভাই আর কবির ভাইয়ের চিকেন তান্দুরি, হোসাইনি ভাইয়ের টুনা কারি আর জুয়েল ভাইয়ের লাচ্ছা সেমাই দিয়ে ভরপেট খাওয়া হলো। হলো অন্যরকম এক ঈদের অভিজ্ঞতা। আমি অনেক ভাগ্যবতী, অনেক ভালো বাংলাদেশি কিছু সহপাঠী পেয়েছি এখানে। এবারের ঈদেও দেশের সবাইকে খুব মনে পড়বে। সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা।
সানজিদা এস উদ্দীন
ইউনিভার্সিটি অব এন্টওয়ার্প
বেলজিয়াম
এই ঈদ সেই ঈদ
মা, আজ কত দিন হয়ে গেল তোমার সেই মধুর ডাকে আমার আর ঘুম ভাঙে না ঈদের সকালে। একসঙ্গে ঈদগাহ মাঠে যাবেন বলে বাবা সবার আগে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতেন আমার জন্য। আরেকটি ঈদ আসছে। দেশের কথা মনে পড়ছে। প্রবাসে আমার সবই আছে, বাঙালি বন্ধুরা আছে, কেবল ‘পরিবার’ শব্দটার সঙ্গে কেমন জানি একটা বিশাল দূরত্ব এই ঈদের দিনেই সবচেয়ে বেশি অনুভব করি।
এখানে ঈদের দিনে ছুটি নেই। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট—কিছু না কিছু থাকেই। আশা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগায়। আবারও সেই মধুর ডাকে ঘুম ভাঙবে, বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া হবে, ফেলে আসা বন্ধুর সঙ্গে প্রাণখুলে আড্ডা দেওয়া হবে, পথের এসব ক্লান্তি ভুলে মা-বাবার স্নেহভরা কোলে ফিরে আসব শিগগিরই এবং কাটাব ঈদের দিন প্রাণখুলে, হাসিমুখে, সব ভুলে, এমন এক স্বপ্নে প্রতিটি দিন কাটে। দিন কেটে যায় আশায় আশায়। আশায় আশায়…।
আবু সাঈদ
ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল, লন্ডন
এক টুকরো বাংলাদেশ
ঈদের দু-এক দিন আগে থেকেই আর্লিংটন, টেক্সাসের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাজ সাজ রব পড়ে যায়, শুরু হয় নানা রকম মুখরোচক রান্নার প্রস্তুতি আর ঈদের দাওয়াত আদান-প্রদান। তবে ঈদটা যদি ছুটির দিনে না পড়ে, তাহলে আমার ঈদের দিনের শুরুটা ঘিরে থাকে অনেকটা বিষণ্নতায়। সকালটা কাটে যথারীতি ক্লাসে। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই যেতে হয় ‘আজ ঈদ’। দিনের প্রথমার্ধ যেমনই কাটুক, চেষ্টা থাকে দুপুর বা বিকেল থেকেই দিনটাকে ঈদের আমেজে উপভোগ করা। শুরু হয় আপু-ভাইয়াদের বাসায় যাতায়াত, আড্ডা আর ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির পালা। আপু-ভাইয়াদের অসাধারণ সব রান্নায় চলে ভূরিভোজ।
সুদূর এই প্রবাসে আমাদের গড়ে তোলা ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’-এর মানুষগুলো ঈদের আমেজ খুব চমৎকারভাবেই ধরে রাখে।
এত কিছুর মধ্যেও কি এই খুশির দিনে হঠাৎ হঠাৎ ফেলে আসা প্রিয় মানুষগুলোর কথা ভেবে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠে না? হ্যাঁ, হয়। তাই ঈদের দিনে দেশে যোগাযোগের অপরিহার্য একটা অংশ হয়ে ওঠে মুঠোফোন, ফেসবুক আর স্কাইপ।
নাবিলা নূর
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন,
যুক্তরাষ্ট্র
উপহার পেলাম চকলেটজার্মানিতে পড়তে আসার দেড় মাসের মাথায় আমার প্রথম ঈদ। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ। শাড়ি পরা, ঈদের রান্না করা—কোনোটাই বাকি রাখিনি আমি। তবে বাড়িতে কথা বলার পরে খুব কষ্ট হচ্ছিল, বাবাকে সালাম করে সালামির আবদার করতে পারছি না। মায়ের বকুনি নেই ঘর সাজানোর জন্য কিংবা ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সারা দিনের প্ল্যান নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।
ঈদ নিয়ে কথা বলছিলাম ফেসবুকে এক জার্মান সহপাঠীর সঙ্গে। ঈদ কী, তা না বুঝলেও ব্যাপারটা তাদের বড়দিনের মতো মনে করে আরও কিছু বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কেক, চকলেট ও উপহার নিয়ে হাজির হলো আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা দিতে। আমার ঈদের আনন্দ বেড়ে গেল শত গুণ!
রুমানা মওলা চৌধুরীস্টুটগার্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মানি
এক দিনের ছুটি
সিঙ্গাপুরে ঈদের ছুটি মাত্র এক দিন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখানে কম নয়। তাই এখানে অনেকটা বাংলাদেশি ঢঙেই ঈদ পালন করি আমরা। দল বেঁধে ঘুরতে বের হই, কোনো বড় ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে যাই। কিন্তু তার পরও সবচেয়ে বেশি মিস করি দেশকে, মা-বাবাকে, পরিবার-পরিজনকে, ক্যাডেট কলেজ ও বুয়েটের বন্ধুদের। এখানে দেশের বন্ধুরা হয়তো নেই, সেই আমেজও হয়তো নেই, কিন্তু সেই অতিথিপরায়ণতা একেবারে মুছে যায়নি সিঙ্গাপুরে। এখানে ‘চায়নিজ গার্ডেন’-এ ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম ঈদের বাংলাদেশি আমেজটা সিঙ্গাপুরে অনেকটাই উপস্থিত। যা হোক, ঈদের দিন ফোনে দেশের সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ঈদের আগে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে আসার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে গিফট পাওয়া নতুন পাঞ্জাবিটা ঈদের দিনই পরা হয়। দেশের সবার প্রতি রইল ঈদের অনেক শুভেচ্ছা, সবাইকে ঈদ মোবারক।
মাহদী রাহমান
ইসিই বিভাগ, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সারা বেলায় আনন্দযুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এলাম বছর খানেক হলো। আসার দুই মাসের মধ্যেই ছিল ঈদ। এখানে ঈদে সরকারি ছুটি না থাকায় ঈদ কর্মব্যস্ততায় কাটাতে হয়। কিন্তু আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে ওই দিন ল্যাবে কোনো কাজ রাখব না, আর ক্লাসেও যাব না। পরে সারা দিন আমরা একসঙ্গে ঘুরে কাটালাম। তখনো অত পরিচিত না হলেও ইউনিভার্সিটির দুই বড় ভাই আর আপু তাঁদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাই সেদিন সারা বেলা মজায় কেটেছিল।
তবু ঈদের উৎসবে মনটা দেশেই পড়ে থাকে। এবার ঈদে পরিবারের লোকেরা বাংলাদেশ থেকে নতুন জামাকাপড় পাঠিয়ে দিয়েছেন, যেন অন্তত দেশি আমেজে ও পোশাকে ঈদ উদ্যাপন করতে পারি। এখন এখানে পরিচিত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে, তাই এবারের ঈদটা আগের চেয়ে ভালো হবে বলেই আশা করছি।
মাসউদ হুসেনকম্পিউটার সায়েন্স,
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
রান্না করি, দাওয়াত দিই
ঈদের দিনটা সাপ্তাহিক ছুটির দিন না হলে ক্লাস শেষে বন্ধুরা একসঙ্গে ঘুরতে বের হই। বেশির ভাগ সময় ইনডোর গেমস ‘বোলিং’ খেলতে যাই। রাতে বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে রুমে ফিরি। আমার জন্য ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলো, বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে নিজে রান্না করে খাওয়াই। দেশি পোলাও-মাংস খেয়ে তারা যখন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে, তখন বেশ মজা পাই।
সারা দিনের ছোটাছুটিতে অনেক কিছু ভুলে থাকি—মায়ের হাতের রান্না, চট্টগ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি। আর তখন একমাত্র সম্বল স্কাইপ আর ফেসবুকের কল্যাণে সবার সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করি। জীবনের ব্যস্ততায় বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এভাবে প্রবাসে ঈদ উদ্যাপনের সমাপ্তি ঘটে। দেশের সবার প্রতি রইল ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সবাইকে ঈদ মোবারক।
মাহবুবুর রহমান
স্পেস সায়েন্স বিভাগ, স্কলটেক ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স ও টেকনোলজি, রাশিয়া
বিদেশে বাঙালিপনাকানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহর খুবই সুন্দর। কিন্তু এত সুন্দরের মধ্যে থেকেও সাগর আর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ছুটে চলা বাসে বসে মন পড়ে থাকে ভিড়ে ঠাসাঠাসি ঢাকা শহরের রাস্তায়। ঈদে এখানে কোনো ছুটি নেই, তাই যথারীতি ব্যস্ততা থাকবেই। তার পরও কাজের শেষে এখানকার বাঙালি বন্ধুদের কারও বাসায় সবাই একসঙ্গে হব, আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া হবে। সত্যি বলতে কি, দেশ থেকে দূরে থেকেও বাঙালিপনা থেকে আমরা কিন্তু দূরে নেই একটুও। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি শিক্ষার্থীদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আর দেশের প্রায় প্রতিটি পালা-পার্বণ খুব ঘটা করে উদ্যাপন করি আমরা। প্রতিবছরই এখানে নতুন নতুন বাঙালি শিক্ষার্থী আসে। অল্প সময়েই পুরোনোদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠা নতুন পরিচিত এসব মানুষের সঙ্গেই এবারের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব।
বেনজীর শামস
স্কুল অব পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ,
ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা
ব্যস্ত ঈদ
বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঈদ আসে ক্ষণিকের আনন্দ নিয়ে। ২০১৩ থেকে আছি কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। আসার দুই মাস পরই ঈদ। ঈদের দিনেও রেগুলার ক্লাস। ক্লাস শেষে আবার ল্যাব। মন খারাপ করে যখন কাজ করছি, তখন ল্যাব সুপারভাইজার পলা জিজ্ঞাসা করল, কী ব্যাপার, মন খারাপ কেন? আমি বললাম, আজ আমাদের ঈদ উৎসবের দিন। পলা তা শুনে আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়।
এরপর রাতে এক বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে মোলাকাত, আড্ডা আর খাওয়াদাওয়া কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিয়েছিল বাঙালি ঈদের আমেজ।
নেসার খাদেম
এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
অন্য রকম ঈদআমি এমএসসি করতে বেলজিয়ামে এসেছি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এর মধ্যেই বিদেশে প্রথম ঈদ করার অভিজ্ঞতা হলো আমার। এখানে ঈদের দিনটা কেটেছে আমার সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা ক্লাস করতে করতে। প্রফেসর টমকে মনে মনে গালি দিতে দিতে কোনো রকমে পার করলাম দিনটা। সারা দিন ক্লাসের চাপ আর দেশে মন ভরে কথা বলতে না পারার কষ্টে ‘আমার ঈদ শেষ’ টাইপের চিন্তা নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। ঠিক তখনই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়! শিখা আপুর করা দুধ পোলাও, আফরোজা আপুর বিফ কারি, জাকারিয়া ভাই আর কবির ভাইয়ের চিকেন তান্দুরি, হোসাইনি ভাইয়ের টুনা কারি আর জুয়েল ভাইয়ের লাচ্ছা সেমাই দিয়ে ভরপেট খাওয়া হলো। হলো অন্যরকম এক ঈদের অভিজ্ঞতা। আমি অনেক ভাগ্যবতী, অনেক ভালো বাংলাদেশি কিছু সহপাঠী পেয়েছি এখানে। এবারের ঈদেও দেশের সবাইকে খুব মনে পড়বে। সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা।
সানজিদা এস উদ্দীন
ইউনিভার্সিটি অব এন্টওয়ার্প
বেলজিয়াম
এই ঈদ সেই ঈদ
মা, আজ কত দিন হয়ে গেল তোমার সেই মধুর ডাকে আমার আর ঘুম ভাঙে না ঈদের সকালে। একসঙ্গে ঈদগাহ মাঠে যাবেন বলে বাবা সবার আগে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতেন আমার জন্য। আরেকটি ঈদ আসছে। দেশের কথা মনে পড়ছে। প্রবাসে আমার সবই আছে, বাঙালি বন্ধুরা আছে, কেবল ‘পরিবার’ শব্দটার সঙ্গে কেমন জানি একটা বিশাল দূরত্ব এই ঈদের দিনেই সবচেয়ে বেশি অনুভব করি।
এখানে ঈদের দিনে ছুটি নেই। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট—কিছু না কিছু থাকেই। আশা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগায়। আবারও সেই মধুর ডাকে ঘুম ভাঙবে, বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়া হবে, ফেলে আসা বন্ধুর সঙ্গে প্রাণখুলে আড্ডা দেওয়া হবে, পথের এসব ক্লান্তি ভুলে মা-বাবার স্নেহভরা কোলে ফিরে আসব শিগগিরই এবং কাটাব ঈদের দিন প্রাণখুলে, হাসিমুখে, সব ভুলে, এমন এক স্বপ্নে প্রতিটি দিন কাটে। দিন কেটে যায় আশায় আশায়। আশায় আশায়…।
আবু সাঈদ
ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুল, লন্ডন
এক টুকরো বাংলাদেশ
ঈদের দু-এক দিন আগে থেকেই আর্লিংটন, টেক্সাসের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাজ সাজ রব পড়ে যায়, শুরু হয় নানা রকম মুখরোচক রান্নার প্রস্তুতি আর ঈদের দাওয়াত আদান-প্রদান। তবে ঈদটা যদি ছুটির দিনে না পড়ে, তাহলে আমার ঈদের দিনের শুরুটা ঘিরে থাকে অনেকটা বিষণ্নতায়। সকালটা কাটে যথারীতি ক্লাসে। কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই যেতে হয় ‘আজ ঈদ’। দিনের প্রথমার্ধ যেমনই কাটুক, চেষ্টা থাকে দুপুর বা বিকেল থেকেই দিনটাকে ঈদের আমেজে উপভোগ করা। শুরু হয় আপু-ভাইয়াদের বাসায় যাতায়াত, আড্ডা আর ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির পালা। আপু-ভাইয়াদের অসাধারণ সব রান্নায় চলে ভূরিভোজ।
সুদূর এই প্রবাসে আমাদের গড়ে তোলা ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’-এর মানুষগুলো ঈদের আমেজ খুব চমৎকারভাবেই ধরে রাখে।
এত কিছুর মধ্যেও কি এই খুশির দিনে হঠাৎ হঠাৎ ফেলে আসা প্রিয় মানুষগুলোর কথা ভেবে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠে না? হ্যাঁ, হয়। তাই ঈদের দিনে দেশে যোগাযোগের অপরিহার্য একটা অংশ হয়ে ওঠে মুঠোফোন, ফেসবুক আর স্কাইপ।
নাবিলা নূর
ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন,
যুক্তরাষ্ট্র
উপহার পেলাম চকলেটজার্মানিতে পড়তে আসার দেড় মাসের মাথায় আমার প্রথম ঈদ। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ। শাড়ি পরা, ঈদের রান্না করা—কোনোটাই বাকি রাখিনি আমি। তবে বাড়িতে কথা বলার পরে খুব কষ্ট হচ্ছিল, বাবাকে সালাম করে সালামির আবদার করতে পারছি না। মায়ের বকুনি নেই ঘর সাজানোর জন্য কিংবা ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সারা দিনের প্ল্যান নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।
ঈদ নিয়ে কথা বলছিলাম ফেসবুকে এক জার্মান সহপাঠীর সঙ্গে। ঈদ কী, তা না বুঝলেও ব্যাপারটা তাদের বড়দিনের মতো মনে করে আরও কিছু বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কেক, চকলেট ও উপহার নিয়ে হাজির হলো আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা দিতে। আমার ঈদের আনন্দ বেড়ে গেল শত গুণ!
রুমানা মওলা চৌধুরীস্টুটগার্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মানি
এক দিনের ছুটি
সিঙ্গাপুরে ঈদের ছুটি মাত্র এক দিন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখানে কম নয়। তাই এখানে অনেকটা বাংলাদেশি ঢঙেই ঈদ পালন করি আমরা। দল বেঁধে ঘুরতে বের হই, কোনো বড় ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে যাই। কিন্তু তার পরও সবচেয়ে বেশি মিস করি দেশকে, মা-বাবাকে, পরিবার-পরিজনকে, ক্যাডেট কলেজ ও বুয়েটের বন্ধুদের। এখানে দেশের বন্ধুরা হয়তো নেই, সেই আমেজও হয়তো নেই, কিন্তু সেই অতিথিপরায়ণতা একেবারে মুছে যায়নি সিঙ্গাপুরে। এখানে ‘চায়নিজ গার্ডেন’-এ ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম ঈদের বাংলাদেশি আমেজটা সিঙ্গাপুরে অনেকটাই উপস্থিত। যা হোক, ঈদের দিন ফোনে দেশের সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ঈদের আগে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে আসার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে গিফট পাওয়া নতুন পাঞ্জাবিটা ঈদের দিনই পরা হয়। দেশের সবার প্রতি রইল ঈদের অনেক শুভেচ্ছা, সবাইকে ঈদ মোবারক।
মাহদী রাহমান
ইসিই বিভাগ, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সারা বেলায় আনন্দযুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এলাম বছর খানেক হলো। আসার দুই মাসের মধ্যেই ছিল ঈদ। এখানে ঈদে সরকারি ছুটি না থাকায় ঈদ কর্মব্যস্ততায় কাটাতে হয়। কিন্তু আমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে ওই দিন ল্যাবে কোনো কাজ রাখব না, আর ক্লাসেও যাব না। পরে সারা দিন আমরা একসঙ্গে ঘুরে কাটালাম। তখনো অত পরিচিত না হলেও ইউনিভার্সিটির দুই বড় ভাই আর আপু তাঁদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাই সেদিন সারা বেলা মজায় কেটেছিল।
তবু ঈদের উৎসবে মনটা দেশেই পড়ে থাকে। এবার ঈদে পরিবারের লোকেরা বাংলাদেশ থেকে নতুন জামাকাপড় পাঠিয়ে দিয়েছেন, যেন অন্তত দেশি আমেজে ও পোশাকে ঈদ উদ্যাপন করতে পারি। এখন এখানে পরিচিত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে, তাই এবারের ঈদটা আগের চেয়ে ভালো হবে বলেই আশা করছি।
মাসউদ হুসেনকম্পিউটার সায়েন্স,
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন