বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হলে হলে হুল্লোড়

২৫ ফুট বাই ৩০ ফুটের বিশালকায় ব্রাজিলের পতাকা। পেলের দেশের সমর্থকদের উদ্দেশ্য, আর্জেন্টাইন-সমর্থকদের চক্ষু চড়কগাছ করে দিয়ে তাঁদের আগে হলের সবচেয়ে মোক্ষম জায়গায় পতাকা টানিয়ে মনস্তাত্ত্বিক জয় নিশ্চিত করা। কিন্তু কিসের কি! ম্যারাডোনার দেশের সমর্থকেরাও কম যান না। সপ্তাহ ঘুরতেই তাই ঠিক ব্রাজিলের পতাকার পাশে আরও বড় পতাকা নিয়ে হাজির তাঁরা। সঙ্গে সুদূর ব্রাজিলে মেসি-নেইমারদের কাছে যেন একটি বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইলেন: তোমরা মাঠের খেলাতে মনোযোগ দাও; হাজার মাইল দূরের একটি দেশ হলেও মাঠের বাইরের খেলাটা আমরাও খেলছি।
বলছিলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের পতাকা উড্ডয়নের এই খেলায় উন্মত্ত থাকা ফুটবলপ্রেমী একঝাঁক তরুণের কথা। বুয়েটে যে এখন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা চলছে, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর মতো এখানেও লেগেছে বিশ্বকাপের উত্তাপ। পড়াশোনার ফাঁকে যতটুকু ফুরসত পাওয়া যাচ্ছে, তখনই করিডোরে কিংবা ক্যানটিনের চায়ের কাপে রীতিমতো ঝড় উঠছে—ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা! বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র, জুনিয়র-নির্বিচারে সবাই সে বাগ্যুদ্ধে শামিল। উদ্দেশ্য একটাই—যুক্তির এই লড়াইয়ে নিজের দলকে এগিয়ে রাখতেই হবে। সঙ্গে পরীক্ষার ফাঁকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা-সমর্থকদের মধ্যে প্রীতি ম্যাচ তো এখনকার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে দুমাস আগেই বাসা থেকে আর্জেন্টিনার জার্সি নিয়ে আসতে ভোলেননি পুরকৌশলের খালেদ মাহমুদ এহসান। সর্বদাই এখন তাঁর গায়ে শোভা পায় এই দেশের জার্সি। একই অবস্থা ত্রিশু, সঞ্জয়, সিজনসহ সবারই। আর্জেন্টিনার একনিষ্ঠ এই সমর্থকদের বিশ্বাস, আগুয়েরো, ডি মারিয়া ফর্ম ধরে রাখলে, আর মেসি তাঁর শৈল্পিক জাদু নিয়ে হাজির হলে তৃতীয় বিশ্বকাপের স্বাদ এবার তাঁরাই পাচ্ছেন। কিন্তু বললেই তো হলো না। মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তাঁদেরই বন্ধু নাবিদুল আলম মনে করিয়ে দেন পাঁচ-পাঁচবার বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের শক্তিশালী রক্ষণের কথা। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান জাহিদ, প্রিমুল ও প্রাঞ্জল। বিশ্বের যেকোনো আক্রমণভাগ রুখে দেওয়ার সামর্থ্যই এবার সাম্বার পুনর্জন্ম ঘটাবে বলে তাঁদের ধারণা। একমত পোষণ করে বুয়েট ফুটবল দলের স্ট্রাইকার শাহাদাত তানভীর সঙ্গে আরেকটু যোগ করে দেন, দেশের মাটিতে খেলার প্রেরণাও তৃতীয় শক্তি হিসেবে এবার কাজ করবে ব্রাজিলের পক্ষে।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এই ভিড়ে ভিন্নমত নিয়ে হাজির বুয়েট দলের উইঙ্গার শাহরিয়ার পারভেজ। গতির রাজা রোনালদোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি জোর গলায় বলেন, এবার নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে পর্তুগাল। তবে ইতিহাসবিশারদ তড়িৎকৌশলের সাকিব হোসেন জার্মানির সমর্থক হলেও তিনি ভালো করেই জানেন, প্রতি বিশ্বকাপ নিজ নিজ মহাদেশেই থাকে। তার পরও ইউরোপপ্রেমী এই সমর্থকের প্রত্যাশা, এবারের বিশ্বকাপ লাতিন আমেরিকায় হলেও জার্মানি তার গতির ছোঁয়া দিয়ে ইতিহাস নতুন করে লিখবে। তাঁর সঙ্গে সুর মেলাতে ভুললেন না টিকিটাকা ভক্ত বুয়েট দলের মিডফিল্ডার মাসুম তারেক। স্পেনের শিরোপাপ্রত্যাশী এই সমর্থকের বিশ্বাস, ছন্দময় ফুটবলের অপরূপ পসরা সাজিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে তারা। অন্যদিকে, ব্ল্যাকহর্স হিসেবে বেলজিয়ামের পক্ষেও বাজি ধরতে দেরি করলেন না আরফাত ও সুজন। কিছুটা মন খারাপ উরুগুইয়ান-সমর্থক মোহাইমিনুল রাফির। সুয়ারেজের বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা নিয়ে তাঁর রাতের ঘুমও হারাম হওয়ার জোগাড়।
বিশ্বকাপ যে শুধুই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা নয়, সেটা আবারও মনে করিয়ে দেন এই তরুণেরা। এই দুই দল বাদেও হলে হলে তাই দু-একটি রুমের সামনে দেখা মিলল ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও ইংল্যান্ডের পতাকা। আর এসব উন্মাদনা বুঝিয়ে দেয়, খেলাটা বিশ্বের সবার জন্য, বিশ্বের সবার কাপ—বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের যে বাঁশি বাজা শুরু হয়েছে, সেই বাঁশি যে আগামী এক মাসব্যাপী একই সুরে একই ঢঙে এই তরুণেরা বাজিয়ে যাবেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^