কেমব্রিজ
লিডারশিপ অ্যাসোসিয়েটসের কনসালটেন্ট জিল হাফনাগেল উপস্থিত তরুণদের শেখান
‘নেতৃত্ব’ আর ‘কর্তৃত্ব’ এক জিনিস নয়। যিনি কর্তা তিনিই যে সব সময় নেতৃত্ব
দেবেন আর বাকিদের তাঁকে অনুসরণ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। পরিবেশ
পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আমরা সবাই সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারি,
নেতৃত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারি। কারণ নেতৃত্ব হওয়া উচিত
কাজকেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়।
‘জনগণের জন্য নেতৃত্ব’ শ্লোগান নিয়ে ১১ থেকে ১৩ জুন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১৪৷ এর আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)৷ নেতৃত্ববিষয়ক এই সম্মেলনে ২০টি দেশের ৫০০ জন তরুণ অংশ নেন।
আমাদের সমাজব্যবস্থা দিনকে দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দেশ ও সমাজের সেবা করার কথা না ভেবে সবাই নিজের ব্যক্তিগত লাভের চিন্তায় মগ্ন। নেতৃত্বের প্রচলিত অর্থ যেখানে আগে নিজের আখের গুছিয়ে পরে দেশের চিন্তা করা, সেখানে এই সম্মেলন ৫০০ তরুণ প্রতিনিধিদের জনগণের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করার এক সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে; তাঁদের শিখিয়েছে চিন্তার কেন্দ্রস্থল থেকে ‘আমি’ শব্দটি সরিয়ে সেখানে রাখতে হবে ‘আমরা’। প্রথম দিনটি ছিল অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ইউএনডিপি ‘লিডারশিপ, রাইটস অ্যান্ড অ্যাকটিভ সিটিজেনশিপ’ বিষয়ে একটি বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টামেসিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নেতৃত্বের নানা খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরেন।
তৃতীয় দিনটি ছিল তরুণ প্রজন্মের জন্য আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা। জেন্ডার, শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের মতো ইস্যুগুলোর পাশাপাশি তরুণেরা কীভাবে রাজনীতিতে আসতে পারেন, সরকারি চাকরিতে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়, ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে জনসেবা করা যায়—এমন নানা বিষয় নিয়ে খ্যাতিমান বক্তাদের বক্তব্য শুনতে দারুণ উৎসাহী ছিলেন ছিল তরুণ প্রতিনিধিরা। নির্ধারিত বক্তব্য শেষ হতে না হতেই প্রশ্নের ঝড় শুরু হয়। অনেকেই তাঁদের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে দিক নির্দেশনা চান বক্তাদের কাছে, অনেকে আবার শেয়ার করেন নানা নতুন আইডিয়া। কিন্তু শুধু আইডিয়া থাকলেই তো হবে না, তাকে কাজে লাগানোটাই যে আসল! সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বিকেলে সবাই দলগতভাবে প্রজেক্ট তৈরি করেন এবং কীভাবে সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে তার পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইবাদুর রহমান ও তাঁর দল ঠিক করে তাঁরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গঠনমূলক রাজনীতির চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করবেন। আবার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তারিফ হাসানের দল ঠিক করে তাঁরা তামাক ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। সবাই মিলে এমন ভিন্নধর্মী ২৪ টি প্রজেক্ট প্ল্যান তৈরি করেন যা তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সাহায্য করবে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখবে। বিওয়াইএলসির ‘লিডারশিপ ল্যাব’ থেকে পরবর্তীতে এই প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সহায়তা দেয়া হবে যাতে তরুণ নেতৃত্ব শুধু বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না থেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পারে।
অবশেষে সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের নেতৃত্বের অধ্যাপক হিউ ও ডোয়ার্টি তাঁর বক্তব্যে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জগুলোকে তরুণদের সামনে তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে নেতৃত্বের পাঁচটি মূলনীতি। প্রথমত, নেতৃত্ব কোনো ব্যক্তিগত পদবি নয়, নেতৃত্বের মূল কথাই হলো কাজ। দ্বিতীয়ত, পদমর্যাদা বা আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না থাকলেও নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, নেতৃত্ব দিতে হলে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে, এ ছাড়া নেতৃত্ব অর্থহীন। চতুর্থত, শুধু নিজের উদ্দেশ্য থাকলেই হবে না, পাশাপাশি আশপাশের সবার সৃজনশীলতা ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। পঞ্চমত, আজকের দিনে নেতৃত্ব একটি বৈশ্বিক বিষয়। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক ও অভিন্ন মানবসমাজ হিসেবে আমাদের চিন্তা করতে হবে, নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবেই শেষ হয় প্রশিক্ষণ, আলোচনা, দলগত কাজ আর কাজের ফাঁকে বন্ধুত্ব আর আড্ডায় কেটে যাওয়া তিনটি দিন।
‘জনগণের জন্য নেতৃত্ব’ শ্লোগান নিয়ে ১১ থেকে ১৩ জুন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১৪৷ এর আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)৷ নেতৃত্ববিষয়ক এই সম্মেলনে ২০টি দেশের ৫০০ জন তরুণ অংশ নেন।
আমাদের সমাজব্যবস্থা দিনকে দিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দেশ ও সমাজের সেবা করার কথা না ভেবে সবাই নিজের ব্যক্তিগত লাভের চিন্তায় মগ্ন। নেতৃত্বের প্রচলিত অর্থ যেখানে আগে নিজের আখের গুছিয়ে পরে দেশের চিন্তা করা, সেখানে এই সম্মেলন ৫০০ তরুণ প্রতিনিধিদের জনগণের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করার এক সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে; তাঁদের শিখিয়েছে চিন্তার কেন্দ্রস্থল থেকে ‘আমি’ শব্দটি সরিয়ে সেখানে রাখতে হবে ‘আমরা’। প্রথম দিনটি ছিল অংশগ্রহণকারীদের নেতৃত্ব প্রশিক্ষণের হাতেখড়ি।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ইউএনডিপি ‘লিডারশিপ, রাইটস অ্যান্ড অ্যাকটিভ সিটিজেনশিপ’ বিষয়ে একটি বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার, ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টামেসিস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নেতৃত্বের নানা খুঁটিনাটি দিক তুলে ধরেন।
তৃতীয় দিনটি ছিল তরুণ প্রজন্মের জন্য আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা। জেন্ডার, শিক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের মতো ইস্যুগুলোর পাশাপাশি তরুণেরা কীভাবে রাজনীতিতে আসতে পারেন, সরকারি চাকরিতে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়, ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে কীভাবে জনসেবা করা যায়—এমন নানা বিষয় নিয়ে খ্যাতিমান বক্তাদের বক্তব্য শুনতে দারুণ উৎসাহী ছিলেন ছিল তরুণ প্রতিনিধিরা। নির্ধারিত বক্তব্য শেষ হতে না হতেই প্রশ্নের ঝড় শুরু হয়। অনেকেই তাঁদের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে দিক নির্দেশনা চান বক্তাদের কাছে, অনেকে আবার শেয়ার করেন নানা নতুন আইডিয়া। কিন্তু শুধু আইডিয়া থাকলেই তো হবে না, তাকে কাজে লাগানোটাই যে আসল! সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বিকেলে সবাই দলগতভাবে প্রজেক্ট তৈরি করেন এবং কীভাবে সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে তার পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইবাদুর রহমান ও তাঁর দল ঠিক করে তাঁরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গঠনমূলক রাজনীতির চর্চাকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করবেন। আবার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তারিফ হাসানের দল ঠিক করে তাঁরা তামাক ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। সবাই মিলে এমন ভিন্নধর্মী ২৪ টি প্রজেক্ট প্ল্যান তৈরি করেন যা তরুণদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সাহায্য করবে এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখবে। বিওয়াইএলসির ‘লিডারশিপ ল্যাব’ থেকে পরবর্তীতে এই প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সহায়তা দেয়া হবে যাতে তরুণ নেতৃত্ব শুধু বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না থেকে জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পারে।
অবশেষে সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের নেতৃত্বের অধ্যাপক হিউ ও ডোয়ার্টি তাঁর বক্তব্যে নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জগুলোকে তরুণদের সামনে তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে নেতৃত্বের পাঁচটি মূলনীতি। প্রথমত, নেতৃত্ব কোনো ব্যক্তিগত পদবি নয়, নেতৃত্বের মূল কথাই হলো কাজ। দ্বিতীয়ত, পদমর্যাদা বা আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না থাকলেও নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, নেতৃত্ব দিতে হলে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে, এ ছাড়া নেতৃত্ব অর্থহীন। চতুর্থত, শুধু নিজের উদ্দেশ্য থাকলেই হবে না, পাশাপাশি আশপাশের সবার সৃজনশীলতা ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। পঞ্চমত, আজকের দিনে নেতৃত্ব একটি বৈশ্বিক বিষয়। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক ও অভিন্ন মানবসমাজ হিসেবে আমাদের চিন্তা করতে হবে, নেতৃত্বের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবেই শেষ হয় প্রশিক্ষণ, আলোচনা, দলগত কাজ আর কাজের ফাঁকে বন্ধুত্ব আর আড্ডায় কেটে যাওয়া তিনটি দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন