‘আপনার
শরীরে কি এখন জ্বর আছে?’, ‘কত দিন হলো ঠান্ডা লেগেছে?’, কিংবা ‘মাথাব্যথা
আছে কি না!’ না, এগুলো কোনো চিকিৎসকের সামনে বসে আপনাকে জানাতে হবে না। বরং
আপনার মোবাইল ফোনের অ্যাপেই আসবে প্রশ্নগুলো, পর্যায়ক্রমে প্রশ্নগুলোর
উত্তর দেওয়ার পর অ্যাপটিই আপনাকে বলে দেবে আপনার রোগ কী হতে
পারে। প্রয়োজনে বলে দেবে কোন ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
আপনাকে। স্মার্টফোনের জিপিএসটি চালু রাখলে আপনার অবস্থানের আশপাশে থাকা সেই
রোগের সবিশেষজ্ঞদের নাম, ফোন নম্বর, হাসপাতাল—সব তথ্যই চলে আসবে। অ্যাপটির
নাম হবে ‘মি. ডক্টর’। এমন এক অ্যাপকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন বাংলাদেশ
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অপু মাহমুদ ও তাঁর দল ‘টিম কিটক্যাট’।
এ রকম আরো আইডিয়ার কথা শোনা গেছে ইএটিএল–প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতার বুটক্যাম্পে। ২০ ডিসেম্বর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে তাঁদের সবার চোখে-মুখেই ছিল নতুন কিছু সৃষ্টির প্রেরণা।
বুয়েটেরই সামিয়া আর ফারজিয়ার দল বানাতে চান এমন একটি অ্যাপ, যেখানে শিক্ষক–শিক্ষার্থী নির্দ্বিধায় সুযোগ পাবেন পরস্পরকে প্রশ্ন-উত্তর করার, একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তাঁদের বিশ্বাস, শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে এই অ্যাপস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ডিইউ ডাইনামিকের’ অ্যাপে থাকবে প্রয়োজনীয় সব জিনিস ব্যবহারকারীর আশপাশেই কোথায় পাওয়া যাবে তার অবস্থান এবং সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য।
ওদিকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়িশা জানান, তাঁদের অ্যাপ মূলত সন্তান জন্মদানের আগে গর্ভাবস্থায় মায়েদের যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে তার সম্ভাব্য সমাধান কী রকম হতে পারে তা নিয়ে। সঙ্গে আশপাশের হাসপাতালগুলোর অবস্থানও উল্লেখ থাকবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জাওয়াদ এবং তাঁর দলের আইডিয়ার নাম ‘ক্রিমিনালওয়াচ’। যেখানে তালিকাভুক্ত সব অপরাধীর এবং তাদের অপরাধ কর্মের একটি ডেটাবেজ থাকবে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দলের অ্যাপসের নাম হবে ‘বুক ফাইন্ডার’ যেখানে থাকবে বাংলাদেশের সব লেখকের বইসংক্রান্ত সব তথ্যের সমাহার।
এ রকম হরেক আইডিয়া এসেছে এই অ্যাপস প্রতিযোগিতায়। সারা দেশ থেকে আসা এসব উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় প্রতিযোগিতার মূল স্লোগান ‘নতুন সৃষ্টির সন্ধানে’ কথাটির তাৎপর্য।
ইএটিএল–প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা
‘নতুন সৃষ্টির সন্ধানে’ স্লোগান সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘ইএটিএল প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা-২০১৫’। মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপ) ৭৪৩টি ধারণাপত্র থেকে বাছাই করা হয় ৫০০ ধারণাপত্র। এই ৫০০ দলের প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী নিয়ে ২০ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে শহীদ সোহরার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো বুটক্যাম্প।
সকালে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের (ইএটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
বুটক্যাম্পের মূল আকর্ষণ ছিল কারিগরি অধিবেশন। যেখানে অ্যাপ তৈরির নানা দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন বিশেষজ্ঞরা। একটা অ্যাপ কেন তৈরি করব, কীভাবে করব, কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হবে, সবকিছু মিলিয়েই ছিল আলোচনা।
দুপুরের পর অনুষ্ঠানে হাজির হন কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, আইসিটি বিভাগের যুগ্মসচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারী ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের মাঝেই হয়ে যায় সফলভাবে অ্যাপ তৈরির কৌশল নিয়ে আরেকটি টেকনিক্যাল সেশন।
এই ক্যাম্প শেষে ইএটিএলের ওয়েবসাইটে (www.eatlapps.com) প্রতিযোগিতার পরের ধাপে উত্তীর্ণ ৩৫০টি ধারণাপত্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই ৩৫০টি দল আগামী ১০ জানুয়ারি বিচারকদের সামনে তাঁদের অ্যাপের ধারণা উপস্থাপন করবেন। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে প্রতিযোগিতা।
বুটক্যাম্পে এসেছিলেন শিক্ষার্থীদের তিন প্রিয় শিক্ষক জামিলুর রেজা চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ কায়কোবাদ
লক্ষ্য হোক এডুটেইনমেন্ট
জামিলুর রেজা চৌধুরী
উপাচার্য, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি
এই ইনডোর স্টেডিয়াম দেখলে আমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। নিজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় এই স্টেডিয়ামের স্ট্রাকচারের ডিজাইন থেকে শুরু করে শেষ হওয়া পর্যন্ত সবকিছুতেই আমি ছিলাম। তখন এই উঁচু ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমগ্র বাংলাদেশে অপ্রতুল ছিল। অথচ এখন দিন দিন সবকিছু অনেক সহজ হয়ে পড়ছে। এই যে মোবাইল ফোনসেট, সেটাও এখন কত সহজলভ্য হয়েছে তা চিন্তাও করা যাবে না।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমরা যাতে এই মোবাইলকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। অ্যাপস নিয়ে আজকের প্রতিযোগিতায় তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তোমরা এমন একটি অ্যাপ বানাও যেটা একই সঙ্গে শিক্ষা ও বিনোদনের মাধ্যম হবে। অর্থাৎ এডুকেশন এবং এন্টারটেইনমেন্ট একসঙ্গে এডুটেইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণের একটা মাধ্যম যাতে হয়ে ওঠে এই মোবাইল অ্যাপ সেদিকে খেয়াল রাখবে।
নিজের জ্ঞান ছড়িয়ে দাও
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিেলট
কিছুদিন আগে কোনো এক জার্নালে পড়েছিলাম যে বাংলাদেশ নাকি আইডিয়ার দিক থেকে মৃতপ্রায় একটি দেশ। আজ জানতে পারলাম যে স্মার্টফোনের অ্যাপের জন্য ৭৪৩টি আইডিয়া এসেছে এই প্রতিযোগিতায়। এর পরও কেউ কীভাবে বলার সাহস পায় যে আমরা আইডিয়ার দিক থেকে মৃত একটি দেশ! এখন থেকে এই দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন দুঃসাহস দেখানোর সাহস না করে।
তোমরা জানো এই দেশটায় অন্যান্য দেশের মতো অগাধ সম্পদ নেই। তবে হ্যাঁ! আমি বিশ্বাস করি, নতুন সহস্রাব্দের আরেক সম্পদ হলো জ্ঞান। যাঁরা জ্ঞান বিতরণ করেন, তাঁরা সম্পদ তৈরি করেন। তাই তোমরা যখনই সুযোগ পাবে, নিজের অর্জিত জ্ঞান আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে আমরা তোমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি না। এ জন্য সব সময় মনে রাখবে তোমাদের মূল্যায়ন এখানেই শেষ নয়। আইনস্টাইন কিংবা নিউটনও কিন্তু তাঁদের প্রথম জীবনে মূল্যায়ন পাননি। কিন্তু তাঁরা ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন।
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার মাথায়
মোহাম্মদ কায়কোবাদ
অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
এটা কমবেশি সবারই জানা যে আমাদের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ১০ থেকে ১১ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। তাই আমাদের এমন কিছু চিন্তা করতে হবে যাতে এই মোবাইলকেই আমরা একটা বড় সম্পদে পরিণত করতে পারি। আমরা যদি এই মোবাইলকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে প্রত্যেকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে বাঁচাতে পারি, তবে সেটা হয়ে যাবে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে কিনা পুরো একটি পদ্মা সেতু বানিয়ে ফেলা সম্ভব।
মনে রাখবে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার মাথায়। এই যেমন আজকের প্রতিযোগিতায় তোমরা মাথা খাটাচ্ছ।
আমার দীর্ঘ এই শিক্ষকতা জীবনে আমি দেখেছি আমার অনেক ছাত্র প্রবাসে গিয়ে তাদের মেধার বলে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ তৈরি করে রেখেছে। আমি জানি এখানে যারা আছো তারাও প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে আমাদের এই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেই।
এ রকম আরো আইডিয়ার কথা শোনা গেছে ইএটিএল–প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতার বুটক্যাম্পে। ২০ ডিসেম্বর মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে তাঁদের সবার চোখে-মুখেই ছিল নতুন কিছু সৃষ্টির প্রেরণা।
বুয়েটেরই সামিয়া আর ফারজিয়ার দল বানাতে চান এমন একটি অ্যাপ, যেখানে শিক্ষক–শিক্ষার্থী নির্দ্বিধায় সুযোগ পাবেন পরস্পরকে প্রশ্ন-উত্তর করার, একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার। তাঁদের বিশ্বাস, শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে এই অ্যাপস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ডিইউ ডাইনামিকের’ অ্যাপে থাকবে প্রয়োজনীয় সব জিনিস ব্যবহারকারীর আশপাশেই কোথায় পাওয়া যাবে তার অবস্থান এবং সেই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য।
ওদিকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মায়িশা জানান, তাঁদের অ্যাপ মূলত সন্তান জন্মদানের আগে গর্ভাবস্থায় মায়েদের যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে তার সম্ভাব্য সমাধান কী রকম হতে পারে তা নিয়ে। সঙ্গে আশপাশের হাসপাতালগুলোর অবস্থানও উল্লেখ থাকবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জাওয়াদ এবং তাঁর দলের আইডিয়ার নাম ‘ক্রিমিনালওয়াচ’। যেখানে তালিকাভুক্ত সব অপরাধীর এবং তাদের অপরাধ কর্মের একটি ডেটাবেজ থাকবে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দলের অ্যাপসের নাম হবে ‘বুক ফাইন্ডার’ যেখানে থাকবে বাংলাদেশের সব লেখকের বইসংক্রান্ত সব তথ্যের সমাহার।
এ রকম হরেক আইডিয়া এসেছে এই অ্যাপস প্রতিযোগিতায়। সারা দেশ থেকে আসা এসব উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় প্রতিযোগিতার মূল স্লোগান ‘নতুন সৃষ্টির সন্ধানে’ কথাটির তাৎপর্য।
ইএটিএল–প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা
‘নতুন সৃষ্টির সন্ধানে’ স্লোগান সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘ইএটিএল প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা-২০১৫’। মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপ) ৭৪৩টি ধারণাপত্র থেকে বাছাই করা হয় ৫০০ ধারণাপত্র। এই ৫০০ দলের প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী নিয়ে ২০ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে শহীদ সোহরার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো বুটক্যাম্প।
সকালে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জামিলুর রেজা চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনোলজিস লিমিটেডের (ইএটিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
বুটক্যাম্পের মূল আকর্ষণ ছিল কারিগরি অধিবেশন। যেখানে অ্যাপ তৈরির নানা দিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন বিশেষজ্ঞরা। একটা অ্যাপ কেন তৈরি করব, কীভাবে করব, কী কী বাধার সম্মুখীন হতে হবে, সবকিছু মিলিয়েই ছিল আলোচনা।
দুপুরের পর অনুষ্ঠানে হাজির হন কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, আইসিটি বিভাগের যুগ্মসচিব শ্যামা প্রসাদ বেপারী ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের মাঝেই হয়ে যায় সফলভাবে অ্যাপ তৈরির কৌশল নিয়ে আরেকটি টেকনিক্যাল সেশন।
এই ক্যাম্প শেষে ইএটিএলের ওয়েবসাইটে (www.eatlapps.com) প্রতিযোগিতার পরের ধাপে উত্তীর্ণ ৩৫০টি ধারণাপত্রের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই ৩৫০টি দল আগামী ১০ জানুয়ারি বিচারকদের সামনে তাঁদের অ্যাপের ধারণা উপস্থাপন করবেন। এভাবে ধাপে ধাপে এগোতে থাকবে প্রতিযোগিতা।
বুটক্যাম্পে এসেছিলেন শিক্ষার্থীদের তিন প্রিয় শিক্ষক জামিলুর রেজা চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ কায়কোবাদ
লক্ষ্য হোক এডুটেইনমেন্ট
জামিলুর রেজা চৌধুরী
উপাচার্য, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি
এই ইনডোর স্টেডিয়াম দেখলে আমার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যায়। নিজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ায় এই স্টেডিয়ামের স্ট্রাকচারের ডিজাইন থেকে শুরু করে শেষ হওয়া পর্যন্ত সবকিছুতেই আমি ছিলাম। তখন এই উঁচু ছাদ ঢালাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমগ্র বাংলাদেশে অপ্রতুল ছিল। অথচ এখন দিন দিন সবকিছু অনেক সহজ হয়ে পড়ছে। এই যে মোবাইল ফোনসেট, সেটাও এখন কত সহজলভ্য হয়েছে তা চিন্তাও করা যাবে না।
আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমরা যাতে এই মোবাইলকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারি। অ্যাপস নিয়ে আজকের প্রতিযোগিতায় তরুণদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তোমরা এমন একটি অ্যাপ বানাও যেটা একই সঙ্গে শিক্ষা ও বিনোদনের মাধ্যম হবে। অর্থাৎ এডুকেশন এবং এন্টারটেইনমেন্ট একসঙ্গে এডুটেইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে। আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণের একটা মাধ্যম যাতে হয়ে ওঠে এই মোবাইল অ্যাপ সেদিকে খেয়াল রাখবে।
নিজের জ্ঞান ছড়িয়ে দাও
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিেলট
কিছুদিন আগে কোনো এক জার্নালে পড়েছিলাম যে বাংলাদেশ নাকি আইডিয়ার দিক থেকে মৃতপ্রায় একটি দেশ। আজ জানতে পারলাম যে স্মার্টফোনের অ্যাপের জন্য ৭৪৩টি আইডিয়া এসেছে এই প্রতিযোগিতায়। এর পরও কেউ কীভাবে বলার সাহস পায় যে আমরা আইডিয়ার দিক থেকে মৃত একটি দেশ! এখন থেকে এই দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন দুঃসাহস দেখানোর সাহস না করে।
তোমরা জানো এই দেশটায় অন্যান্য দেশের মতো অগাধ সম্পদ নেই। তবে হ্যাঁ! আমি বিশ্বাস করি, নতুন সহস্রাব্দের আরেক সম্পদ হলো জ্ঞান। যাঁরা জ্ঞান বিতরণ করেন, তাঁরা সম্পদ তৈরি করেন। তাই তোমরা যখনই সুযোগ পাবে, নিজের অর্জিত জ্ঞান আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে আমরা তোমাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারি না। এ জন্য সব সময় মনে রাখবে তোমাদের মূল্যায়ন এখানেই শেষ নয়। আইনস্টাইন কিংবা নিউটনও কিন্তু তাঁদের প্রথম জীবনে মূল্যায়ন পাননি। কিন্তু তাঁরা ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন।
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার মাথায়
মোহাম্মদ কায়কোবাদ
অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
এটা কমবেশি সবারই জানা যে আমাদের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ১০ থেকে ১১ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। তাই আমাদের এমন কিছু চিন্তা করতে হবে যাতে এই মোবাইলকেই আমরা একটা বড় সম্পদে পরিণত করতে পারি। আমরা যদি এই মোবাইলকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে প্রত্যেকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে বাঁচাতে পারি, তবে সেটা হয়ে যাবে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে কিনা পুরো একটি পদ্মা সেতু বানিয়ে ফেলা সম্ভব।
মনে রাখবে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার মাথায়। এই যেমন আজকের প্রতিযোগিতায় তোমরা মাথা খাটাচ্ছ।
আমার দীর্ঘ এই শিক্ষকতা জীবনে আমি দেখেছি আমার অনেক ছাত্র প্রবাসে গিয়ে তাদের মেধার বলে ছোট্ট একটি বাংলাদেশ তৈরি করে রেখেছে। আমি জানি এখানে যারা আছো তারাও প্রত্যেকে কোনো না কোনোভাবে আমাদের এই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন