বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং শিক্ষা

LATEST :
সাইটটির উন্নয়ন চলছে এবং শীঘ্রই উন্নয়ন করা হবে

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৫

আশার আলো, আলোয় বসতি


 তাঁরা পাঁচজন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছিলেন, সামনে ভালো চাকরি-ছিমছাম গোছানো জীবনের হাতছানি ছিল। ছিল অর্থ উপার্জনের নেশায় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ারও সুযোগ। কিন্তু তাঁরা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয়। স্বপ্ন দেখছেন সেসব এলাকার শিশুদের কাছে ল্যাপটপে করে আধুনিক শিক্ষার সব উপকরণ পৌঁছে দিতে। কিন্তু, সেসব এলাকায় তো বিদ্যুৎই নেই! তাহলে কি তাঁরা বসে থাকবেন! তা কি সম্ভব? শত বিঘ্নকে টপকে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করাই যে তাঁদের জীবনের লক্ষ্য। ঠিক হলো সৌরশক্তি দিয়েই সেসব এলাকার শিশুদের জীবন পাল্টে দেবেন তাঁরা। তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের নাম দিয়েছেন লাইট অব হোপ বা আশার আলো।
স্বপ্নের পথে প্রথম পদক্ষেপ ছিল ২০১৩ সালে ডেল আয়োজিত এডুকেশন চ্যালেঞ্জে অংশ নেওয়া। সেখানে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের পাঠানো ৮১৬টি প্রজেক্টের মাঝে বাংলাদেশের লাইট অব হোপ তৃতীয় স্থান লাভ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, পুরস্কার জিতে প্রজেক্টের আর তেমন অগ্রগতি দেখা যায় না। কিন্তু লাইট অব হোপের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। শুধু পুরস্কারের অর্থ জিতে তারা পাঁচজনে থামেননি, গত ৭ জুন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার পটুয়াভাঙ্গা গ্রামের পরশমণি শিক্ষা একাডেমিতে তাঁরা সোলার প্যানেল স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপটি বাস্তবে সম্পন্ন করেন। ১৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলে হস্তান্তর করা হয় ল্যাপটপ, প্রোজেক্টরসহ ই-শিক্ষার সব উপকরণ। আধুনিক শিক্ষার সব সুবিধা নিয়ে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা এখন স্বপ্ন দেখছে নতুন কিছু করার। লাইট অব হোপ শুধু শিক্ষা উপকরণই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়নি, সেখানকার শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে। তা ছাড়া অভিভাবকদের স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বাল্যবিবাহ, পরিবেশগত পরিবর্তন বিষয়ে স্কুলের মাধ্যমে সচেতন করে তুলছে। বাংলাদেশ সরকার প্রবর্তিত সব কটি অনলাইন সার্ভিসই এই স্কুলে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে স্কুলটি হয়ে উঠেছে শিক্ষা ও তথ্য-যোগাযোগের একটি সেতুবন্ধ।
এই কর্মযজ্ঞের পাঁচজন কান্ডারি হলেন ওয়ালি, মারুফ, শোয়েব, মোমেল ও তৃপ্তি। তাঁদের মধ্যে ওয়ালি ও তৃপ্তি জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব ফ্লেন্সবুর্গে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। মারুফ ও শোয়েব উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (এআইইউবি) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। মোমেল অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি’র শিক্ষার্থী। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনায় যোগ দিয়েছেন আরও আট স্বাপ্নিক—রোমেল, ফাহিম, জাকির, সানি, আনিকা, মুকুল, তাসকিন ও শরীফ। তাঁরা সবাই বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত৷ কর্মব্যস্ততার ফাঁকে, ছুটির দিনে, অবসরে তাঁরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আশার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। লাইট অব হোপ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ই-শিক্ষা উপকরণ (পাঠপরিকল্পনা, অ্যানিমেশন, লিপিলিখন, ভিডিও, ডাবিং) তৈরিতে অংশ নিচ্ছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল। এ ছাড়া কারিগরি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিদেশে বসবাসরত অনেক বাঙালি বন্ধু।
লাইট অব হোপ তাঁদের পরবর্তী স্কুলের কাজ করছে চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতনে। প্রজেক্টের ব্যয় মেটানোর জন্য এত দিন ক্রাউড ফান্ডিং (স্বেচ্ছা অনুদানের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন) পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। কিন্তু আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে এবং সারা দেশে আরও অনেক স্কুলে এ ধরনের ই-শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিতে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
লাইট অব হোপের মূল নায়কেরা তাঁদের কথা তুলে ধরেন এভাবে, ‘প্রতিটি শিশুরই জন্ম হয় একই পরিমাণ সম্ভাবনা নিয়ে, কিন্তু বেড়ে ওঠার সুযোগের পার্থক্য তাদের মধ্যে ব্যবধানের সৃষ্টি করে। আমরা সুবিধাবঞ্চিত সেসব শিশুর কাছে আধুনিক শিক্ষা উপকরণ পৌঁছে দিয়ে এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে চাই।’
যোগাযোগ: ফেসবুক www.fb.com/light.of.hope.bangladesh, ই-মেইল: bd.lightofhope@gmail.com
ওয়েবসাইট: ww.lightofhopebd.org,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

স্বত্বাধিকারী © ২০১৫ প্রোগ্রামিং এর মহাজগৎ সব অধিকার সংরক্ষিত
^