অস্কার, এমি, গোল্ডেন গ্লোব, গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন অভিনেতা, স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান রবিন উইলিয়ামস। ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। কদিন আগে (১১ আগস্ট ২০১৪ সালের) তিনি লোকান্তরিত হন।
আমার জন্ম শিকাগোতে। আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি ছিল না। কিন্তু আমরা অনিন্দ্যসুন্দর এক ভাড়াবাড়িতে থাকতাম। আমার অতীতটা ছিল অনেক সুন্দর। আবার যদি সেই সময়ে ফিরে যেতে পারতাম। ইশ্! ব্যক্তি আমি যা, তার সবটুকুই এসেছে বাবার জিন থেকে। আর বাবা ছিলেন ভীষণ যৌক্তিক, শান্তশিষ্ট কিন্তু শক্তিমান ব্যক্তিত্ব। প্রত্যেক সন্তানের কাছে তাদের বাবা সুপার হিরো। আমার বাবাও। কমেডিয়ান হিসেবে আমার সব গুণ পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে। মা সব সময় বলতেন, পৃথিবীতে সীমানা বলে কিছু নেই। আমার মা ছিলেন চমৎকার এক নারী, তাঁর মতো আদুরে আর ভালো মানুষ আমি পৃথিবীতে দেখিনি। মা সব মানুষের মঙ্গলে বিশ্বাস করতেন। যেই বিশ্বাস পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বিশ্বাস বলে মনে হয় আমার।
একবার আমি গায়ক বব ডিলানের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ডিলান আমাকে অনেকগুলো কঠিন প্রশ্ন করে বিব্রত করে দিয়েছিল। আমিও কম যাই না, আমিও কঠিন উত্তর দিয়ে তাকে ভড়কে দিই। ডিলান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘অন্য কারও মস্তিষ্ক বেছে নিতে চাইলে কারটা নেব?’ আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘কয়েক ঘণ্টার জন্য স্টিফেন হকিংয়ের মাথা পেলে মন্দ হতো না। কিন্তু আমি সব সময়ের জন্য আইনস্টাইনের মাথাটাই বেছে নেব।’ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তিনটি সংগ্রহের বস্তু হলো: আইনস্টাইনের অটোগ্রাফ, বাবার দেওয়া একটা ছুরি আর পাথরের তৈরি ছোট একটা মূর্তি। আরেকটি বস্তু আমার খুব প্রিয়, আমার দাদার ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দিয়ে দাদা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ছবি তুলতেন। অভিনেতা না হলে মনে হয় আমি কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়েই পড়াশোনা করে পেট
চালাতাম। আর কখনো ছবি বানানোর সুযোগ পেলে আমি আইজ্যাক আসিমভের দ্য ফাউন্ডেশনকে ভিত্তি করে সিনেমা বানাতাম। আমি ডিসকভারি চ্যানেলে আসক্ত। কুমিরদের কাজকর্ম আমাকে ভীষণ টানে।
আমার কোনো সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলে আমি তা কখনই পড়ি না। আমি ভয়ে পড়ি না। যদি নিজের সম্পর্কে খুব বাজে কিছু বলি থাকি! আমার নিজেকেই সবচেয়ে বড় ভয়। মানুষ হিসেবে আমরা নিজের ক্ষতি নিজেই সবচেয়ে বেশি করি। তাই পড়ি না। কখনো কোনো কিছু চুরি করার সুযোগ পেলে আমি পৃথিবীর সব পারমাণবিক বোমার নকশা চুরি করে নষ্ট করে ফেলতাম। সারা পৃথিবীতে যত সংঘাতের খবর পাই, সবই আমাকে কাঁদায়। আমি নিরুপায়, পৃথিবীর জন্য আমার কি কিছুই করার নেই? আমি সামান্য একজন কমেডিয়ান। আমার হাত-পা বাঁধা। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি স্টিফেন হকিংকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে সহায়তা করতাম।
কিশোর বয়সে আমার ইচ্ছে করত লেওনার্দো দা ভিঞ্চির এজেন্ট হতে। আমি তাঁকে বকতে পারতাম, ‘লেওনার্দো, তুমি এখন কী করছ? অযথা সময় নষ্ট কেন করছ! তোমার কত কাজ বাকি!’ কিন্তু একটা সময় আমার কেন জানি মনে হতো, আমি যদি পেলে হতাম! তিনি বড়মাপের ফুটবলার। কখনো অবসর মিললে আমি বেটোফেনের পঞ্চম সুর কম্পোজ করার চেষ্টা করতাম। আমার জীবনটা মনে হয় দুই চাকার বাইসাইকেল। সাইকেলের মতো আমিও দুই পায়ে চলি, সোজা চলার চেষ্টা করি।
আরেকটা জিনিস আমি খুব পছন্দ করি, তা হলো জাদু। হা করে আমি জাদু দেখি। আমার মনে হয়, মানুষই সবচেয়ে বড় জাদুকর। সবাই জাদুকর। সে সব পারে। যা ভাবে তা-ই করে, যা কল্পনা করে, তা-ই বাস্তবে আনতে পারে। আমিও একসময় জাদুকর ছিলাম। আমার ১৬ বছর বয়সের একটা ঘটনা সব সময় মনে পড়ে। সময়টা তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। একটা রোগাক্রান্ত ওক গাছ ভেঙে আমাদের এলাকার রাস্তা আটকে দেয়। আমি সেই সময়টাতে অন্যদের সঙ্গে মিলে গাছটা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিই। আমি কেন সেই কাজ করেছিলাম, এখনো জানি না। শুধু জানি, সামনে বিপত্তি দেখা দিলে তা দুই হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়া যায়। জাদুর মতোই।
যদি কখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কথা বলার সুযোগ পেতাম, তাহলে বেশি কিছু বলতাম না। আমি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের বলতাম, নিজেকে তৈরি করার জন্য যা দরকার, তাই কর। নিজেকে আগামীর জন্য তৈরি কর। বেঁচে থাকতে আমাদের সবার ছোটখাটো একটা রাইফেল লাগে, আর সেটা হলো জ্ঞান। যত পারো শেখো, শেখার কোনো শেষ নেই। সবকিছু জানার চেষ্টা করো। পচা মাংস থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। সময়টা এখন হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের। নিজেকে তৈরি করতে হবে নিজেকেই। আর সেই সঙ্গে চুপ থাকতে শেখো। নিস্তব্ধতার মূল্য অমূল্য। আর সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। তোমাকে বাছাই করতে হবে কীভাবে তুমি মরবে।
তথ্যসূত্র: রবিন উইলিয়ামস ডট নেট অবলম্বনে ভাষান্তর করেছেন জাহিদ হোসাইন খান
আমার জন্ম শিকাগোতে। আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি ছিল না। কিন্তু আমরা অনিন্দ্যসুন্দর এক ভাড়াবাড়িতে থাকতাম। আমার অতীতটা ছিল অনেক সুন্দর। আবার যদি সেই সময়ে ফিরে যেতে পারতাম। ইশ্! ব্যক্তি আমি যা, তার সবটুকুই এসেছে বাবার জিন থেকে। আর বাবা ছিলেন ভীষণ যৌক্তিক, শান্তশিষ্ট কিন্তু শক্তিমান ব্যক্তিত্ব। প্রত্যেক সন্তানের কাছে তাদের বাবা সুপার হিরো। আমার বাবাও। কমেডিয়ান হিসেবে আমার সব গুণ পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে। মা সব সময় বলতেন, পৃথিবীতে সীমানা বলে কিছু নেই। আমার মা ছিলেন চমৎকার এক নারী, তাঁর মতো আদুরে আর ভালো মানুষ আমি পৃথিবীতে দেখিনি। মা সব মানুষের মঙ্গলে বিশ্বাস করতেন। যেই বিশ্বাস পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বিশ্বাস বলে মনে হয় আমার।
একবার আমি গায়ক বব ডিলানের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ডিলান আমাকে অনেকগুলো কঠিন প্রশ্ন করে বিব্রত করে দিয়েছিল। আমিও কম যাই না, আমিও কঠিন উত্তর দিয়ে তাকে ভড়কে দিই। ডিলান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘অন্য কারও মস্তিষ্ক বেছে নিতে চাইলে কারটা নেব?’ আমি উত্তরে বলেছিলাম, ‘কয়েক ঘণ্টার জন্য স্টিফেন হকিংয়ের মাথা পেলে মন্দ হতো না। কিন্তু আমি সব সময়ের জন্য আইনস্টাইনের মাথাটাই বেছে নেব।’ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় তিনটি সংগ্রহের বস্তু হলো: আইনস্টাইনের অটোগ্রাফ, বাবার দেওয়া একটা ছুরি আর পাথরের তৈরি ছোট একটা মূর্তি। আরেকটি বস্তু আমার খুব প্রিয়, আমার দাদার ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দিয়ে দাদা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে ছবি তুলতেন। অভিনেতা না হলে মনে হয় আমি কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়েই পড়াশোনা করে পেট
চালাতাম। আর কখনো ছবি বানানোর সুযোগ পেলে আমি আইজ্যাক আসিমভের দ্য ফাউন্ডেশনকে ভিত্তি করে সিনেমা বানাতাম। আমি ডিসকভারি চ্যানেলে আসক্ত। কুমিরদের কাজকর্ম আমাকে ভীষণ টানে।
আমার কোনো সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হলে আমি তা কখনই পড়ি না। আমি ভয়ে পড়ি না। যদি নিজের সম্পর্কে খুব বাজে কিছু বলি থাকি! আমার নিজেকেই সবচেয়ে বড় ভয়। মানুষ হিসেবে আমরা নিজের ক্ষতি নিজেই সবচেয়ে বেশি করি। তাই পড়ি না। কখনো কোনো কিছু চুরি করার সুযোগ পেলে আমি পৃথিবীর সব পারমাণবিক বোমার নকশা চুরি করে নষ্ট করে ফেলতাম। সারা পৃথিবীতে যত সংঘাতের খবর পাই, সবই আমাকে কাঁদায়। আমি নিরুপায়, পৃথিবীর জন্য আমার কি কিছুই করার নেই? আমি সামান্য একজন কমেডিয়ান। আমার হাত-পা বাঁধা। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি স্টিফেন হকিংকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে সহায়তা করতাম।
কিশোর বয়সে আমার ইচ্ছে করত লেওনার্দো দা ভিঞ্চির এজেন্ট হতে। আমি তাঁকে বকতে পারতাম, ‘লেওনার্দো, তুমি এখন কী করছ? অযথা সময় নষ্ট কেন করছ! তোমার কত কাজ বাকি!’ কিন্তু একটা সময় আমার কেন জানি মনে হতো, আমি যদি পেলে হতাম! তিনি বড়মাপের ফুটবলার। কখনো অবসর মিললে আমি বেটোফেনের পঞ্চম সুর কম্পোজ করার চেষ্টা করতাম। আমার জীবনটা মনে হয় দুই চাকার বাইসাইকেল। সাইকেলের মতো আমিও দুই পায়ে চলি, সোজা চলার চেষ্টা করি।
আরেকটা জিনিস আমি খুব পছন্দ করি, তা হলো জাদু। হা করে আমি জাদু দেখি। আমার মনে হয়, মানুষই সবচেয়ে বড় জাদুকর। সবাই জাদুকর। সে সব পারে। যা ভাবে তা-ই করে, যা কল্পনা করে, তা-ই বাস্তবে আনতে পারে। আমিও একসময় জাদুকর ছিলাম। আমার ১৬ বছর বয়সের একটা ঘটনা সব সময় মনে পড়ে। সময়টা তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। একটা রোগাক্রান্ত ওক গাছ ভেঙে আমাদের এলাকার রাস্তা আটকে দেয়। আমি সেই সময়টাতে অন্যদের সঙ্গে মিলে গাছটা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিই। আমি কেন সেই কাজ করেছিলাম, এখনো জানি না। শুধু জানি, সামনে বিপত্তি দেখা দিলে তা দুই হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়া যায়। জাদুর মতোই।
যদি কখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে কথা বলার সুযোগ পেতাম, তাহলে বেশি কিছু বলতাম না। আমি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের বলতাম, নিজেকে তৈরি করার জন্য যা দরকার, তাই কর। নিজেকে আগামীর জন্য তৈরি কর। বেঁচে থাকতে আমাদের সবার ছোটখাটো একটা রাইফেল লাগে, আর সেটা হলো জ্ঞান। যত পারো শেখো, শেখার কোনো শেষ নেই। সবকিছু জানার চেষ্টা করো। পচা মাংস থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। সময়টা এখন হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের। নিজেকে তৈরি করতে হবে নিজেকেই। আর সেই সঙ্গে চুপ থাকতে শেখো। নিস্তব্ধতার মূল্য অমূল্য। আর সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। তোমাকে বাছাই করতে হবে কীভাবে তুমি মরবে।
তথ্যসূত্র: রবিন উইলিয়ামস ডট নেট অবলম্বনে ভাষান্তর করেছেন জাহিদ হোসাইন খান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন